ঢাকা, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

‘উপদেষ্টাদের অনেকেই আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান’

২০২৪ অক্টোবর ১৫ ১৯:২৩:১৫
‘উপদেষ্টাদের অনেকেই আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ড. মুহাম্মদ ইউনূস যাদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন, তাদের অনেকেই আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

সেই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা ধারণ করেন এমন ব্যক্তিদের সরকারে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান জন-আকাঙ্ক্ষা: রাষ্ট্র মেরামতে প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই সরকার গঠিত হয়েছে জনরায়ে, জনগণের ইচ্ছায়। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, আমরা ধীরে ধীরে হতাশ হচ্ছি! প্রফেসর ইউনূস দেশের কৃতি সন্তান, বিশ্বব্যাপী তাঁর পরিচিতি। তিনি বিদেশে বাংলাদেশের ফেইস, তাঁর চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আমরা এই মুহূর্তে পেতাম না। তিনি ক্ষমতায় থাকতেও চান না, আগেও তাকে অফার করা হয়েছিল, থাকেননি। এখনো যে তিনি খুব ইনজয় করছেন, তা মনে হয় না। কিন্তু একটা কথা আমার বলতে হচ্ছে, তাঁর টিম সিলেকশনটা ঠিক হয়নি। তিনি যাঁদের সঙ্গে নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের আজীবন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা আছে। হয়তো প্রকাশ করতে পারেন না, কিন্তু ভাবভঙ্গিতে এমনই মনে হয়।’

সংস্কারের জন্য কত সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘ছয়টি যে কমিশন করা হয়েছে, এদের প্রজ্ঞাপন করতেই ছয় দিনের বেশি সময় লেগেছে, যেটা দুই দিনের বেশি লাগার কথা না। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে যাচ্ছে। পতিত শক্তি আবার ফিরে আসতে চায়। আনসার বাহিনী পর্যন্ত কু করতে চায়, এমনই দুর্বল একটা সরকার।’

এসময় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূস একেকজন উপদেষ্টাকে চারটা-পাঁচটা করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে এদের কোনো অভিজ্ঞতাই তো নেই। এই ব্যাপারে তাঁকে চিন্তা করতে হবে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ভালোদের নিয়ে দায়িত্ব দেন। দরকার হলে যে ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছে, তাদের থেকে আরও লোক নেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের টিমে খেলে এসেছেন অতীতে, তাঁদের আর মন্ত্রিপরিষদে আমরা দেখতে চাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। সরকার অনেক কথা বলে, কিন্তু একটা কথা তাদের মুখ থেকে শোনা যায় না যে নির্বাচন কবে হবে। ইলেকশন কমিশন কবে গঠন হবে! অরাজনৈতিক এবং বিজ্ঞ লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। অরডিন্যান্সের মাধ্যমে আইন যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তা দ্রুত করা যায়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা সব সময় বলেছি, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নির্বাচন দেওয়ার জন্য এক বছর সময় যথেষ্ট।’

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যে ক্ষতি করেছে বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা মনে করেছিলাম সুন্দর একটা দেশ আমরা পাব। গণতন্ত্র চিরদিন থাকবে বাংলাদেশের বুকে, কোনো বৈষম্য থাকবে না। মানবিক মর্যাদা, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু যতই দিন গেছে, ততই আস্তে আস্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দূরে সরে গেছে। আমরা পেয়েছি একটা একদলীয় রাষ্ট্র—বাকশাল।’

নির্বাচন-ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে হাফিজ বলেন, ‘নির্বাচনে কেউ যেন টাকা দিয়ে ভোট প্রভাবিত করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করেন। জাতীয় সংসদ কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। একজন স্কুলশিক্ষক যেন নির্বাচন করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আগস্ট বিপ্লবের আরেকটা জিনিস আমরা দেখতে পাব, যে সরকারই ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের কথা তার মাথায় থাকবে। তারা ইচ্ছা করে যা আগের মতো লুটপাটের সাহস করবে না। বিএনপি হোক জামাত হোক, আন্দোলনের যে অভিজ্ঞতা তা প্রত্যেকের মাথায় থাকবে।’

সভায় রাষ্ট্র মেরামতের ২৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।

এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন—গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলবার্ট পি কস্টা, জানিপপের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ প্রমুখ।

তারিক/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে