ঢাকা, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

হাসিনার মন্ত্রী-এমপিরা আত্মগোপনে, দেশ ছেড়েছেন অনেকে

২০২৪ আগস্ট ০৬ ০৬:৫২:৫১
হাসিনার মন্ত্রী-এমপিরা আত্মগোপনে, দেশ ছেড়েছেন অনেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নজিরবিহীন ক্ষমতার অপব্যবহার, চরম দুঃশাসন ও সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার এক অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। পালিয়ে গেছেন ভীষণ দম্বকারী শেখ হাসিনা। তার আজ্ঞাবহ মন্ত্রী-এমপিরা প্রায় সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের অনেকে মন্ত্রী-এমপি দেশ ত্যাগ করেছেন। তবে যারা দেশ ত্যাগ করতে পারেননি তাদের অনেকেই প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এদিকে পলায়নপর মন্ত্রী-এমপিদের বেশ কয়েকজন সেনা হেফাজতে ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয় চেয়েছেন এমন খবরও পাওয়া যায়।

এর আগে এমপি-মন্ত্রীদের দেশত্যাগ ঠেকাতে দেশের সবকটি বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়। দেশের সীমান্তগুলোতেও রেড এলার্ট জারি করা হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ভোর থেকেই প্রভাবশালী হিসাবে পরিচিত মন্ত্রী-এমপিদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। অনেকের মুঠোফোন ছিল বন্ধ। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক,শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক অজ্ঞাত স্থানে চলে যান।

এর আগে হাসিনা সরকারের ক্ষমতাধর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে বিমানযোগে দেশ ছাড়েন।

এর আগে রোববার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের পরিবারের সদস্যরা ইকে ৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটযোগে দেশ ত্যাগ করেন। তাদের গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দর।

মূলত এর পরপরই গণহারে মন্ত্রী-এমপিদের দেশ ত্যাগের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সূত্র জানায়, মন্ত্রী-এমপিদের অনেকে শেষ মুহূর্তে শত চেষ্টা করেও আর দেশ ছাড়তে পারেননি। রোববার ও সোমবার দুদিন টিকিটের জন্য তারা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বিফল হন।

অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে বিদেশ পাঠাতে পারলেও নিজে আর যেতে পারেননি। এদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক দেশেই আত্মগোপনে আছেন বলে জানা যায়।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সোমবার বিকাল পর্যন্ত তার বনানীর বাসায় অবস্থান করছিলেন। সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার পর থেকে তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

এদিকে আলোচিত সমাজকল্যণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সরকারের পতনের পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা তার চাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম-৩ আসনের (সন্দ্বীপ) সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান ওরফে মিতা সপরিবারে দেশ ছাড়তে ঢাকায় ছুটে আসেন। বিকাল ৫টায় তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে হাজির হন। কিন্তু বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণার খবরে তিনি ফিরে আসেন। পরে গুলশানের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান।

এর আগে রোববার মন্ত্রী-এমপি ও সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের অনেকে বিশেষ প্রটোকল চেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে চিঠি দেয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এভসেক-এর সহকারী পরিচালক নাছিমা শাহীন স্বাক্ষরিত তালিকা অনুযায়ী দেশ ছাড়া মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে রয়েছেন পূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, এমপি নুর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী, উত্তরা এলাকার সাবেক এমপি হাবিব হাসান এবং জেপি প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিমানযোগে দেশ ছাড়েন।

এছাড়া দেশ ছেড়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, বিচারপতি ও উচ্চপদস্থ আমলা। এদের মধ্যে সিনিয়র সচিব ও তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম, ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ব্যবসায়ী নেতা জসিম উদ্দিন, ইমরানুর রহমান ওমহিউদ্দিন মোনেম।

রোববার রাত থেকেই নানা মাধ্যমে মন্ত্রী-এমপিদের দেশত্যাগের খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি বেশ কয়েকজনের ফ্লাইট নম্বর ও বিমানের ভেতরে বসে থাকার ছবিও আসতে থাকে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। এমনকি পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত হাসিনা সরকারের ভেতরের এমন কাহিল অবস্থা বাইরে থেকে কেউ এতটুকুও আঁচ করতে পারেনি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন এমন খবর ছিটেফোঁটাও জানাতে পারেনি কেউ।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে