ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

সৌদি আরব এখন বাংলাদেশি পর্যটকদের দ্বিতীয় গন্তব্য

২০২৪ জুন ১৫ ০৭:০৫:৩৭
সৌদি আরব এখন বাংলাদেশি পর্যটকদের দ্বিতীয় গন্তব্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ একটি দেশ। ইসলামের পবিত্র দুই নগরী মক্কা ও মদিনা এখানে অবস্থিত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মুসলমান দেশটিতে হজ ও ওমরাহ পালন করতে যাচ্ছেন। গত বছরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ কোটিরও বেশি পর্যটক সৌদি আরবে গেছেন।

সৌদি আরবে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশী যাচ্ছে। তাদের বড় একটি অংশ প্রবাসী শ্রমিক, যারা দেশটিতে যাচ্ছেন মূলত কর্মসংস্থানের খোঁজে। এছাড়া বাংলাদেশীরা মূলত ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সারা বছরই দেশটিতে যাতায়াত করছেন।

বিপুলসংখ্যক পর্যটক আগমনের সুবাদে দেশটির পর্যটন খাতের আয় এখন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি)।

ডব্লিউটিটিসির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সৌদি আরব ট্রাভেল ও ট্যুরিজম থেকে ১১৮.৪৪ বিলিয়ন (১১ হাজার ৮৪৪ কোটি) ডলার আয় করেছে, যা দেশটির মোট জিডিপির ১১.৫০ শতাংশ। সৌদি সরকার এখন ভিশন-২০৩০-এর আওতায় আগামী পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যেই পর্যটকের সংখ্যা ১৫ কোটিতে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এদিকে বাংলাদেশী পর্যটকদের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবের অবস্থান এখন ভারতের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রতি বছর বিদেশে পর্যটনে যাওয়া বাংলাদেশীদের ৮.২১ শতাংশই যাচ্ছেন সৌদি আরবে। এমন তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট ২০২০-এ প্রকাশিত পরিসংখ্যানে।

সৌদি সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশীদের দেশটিতে গমনের জন্য সুযোগ আরো অবারিত করেছে। এরই অংশ হিসেবে ওমরাহ ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৯০ দিন করা হয়েছে। এই ভিসা ব্যবহার করে বাংলাদেশীরা এখন সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা ছাড়া অন্যান্য শহরও ভ্রমণ করতে পারবেন।

সৌদি আরব ভ্রমণে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াও সহজ করেছে দেশটির সরকার। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওমরাহ ভিসা দেয়া হচ্ছে। নারীরাও বাধ্যবাধকতা ছাড়াই মক্কা-মদিনায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, যা আগে ছিল না।

এছাড়া সরাসরি ওমরাহ ভিসার জন্য ‘নুসুক’ নামে অনলাইন প্লাটফর্মে রেজিস্ট্রেশন করে ভিসা নেয়ার সুযোগ, ট্রানজিট ভিসা, যার মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোয় যাওয়ার জন্য বাংলাদেশী নাগরিকদের চারদিনের জন্য ভিসার সুযোগ, সৌদিতে ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা হিসেবে বিনিয়োগের সুযোগও বাড়িয়েছে দেশটি।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করেছেন ৪৫ লাখের বেশি মানুষ। এই তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালন করেছেন ২ লাখ ৩১ হাজার ৯২ জন।

প্রতি বছর গড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ বাংলাদেশি ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যাচ্ছেন। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ওমরাহ, প্লেন ভাড়া, ভিসা প্রসেসিং, ভ্রমণ ও কেনাকাটায় গড়ে মাথাপিছু দুই লাখ টাকা খরচ করে এসব বাংলাদেশি। তিন লাখ বাংলাদেশির খরচের হিসাব করলে দেখা যায়, বাংলাদেশিরা শুধু ওমরাহ পালনে বছরে অন্তত ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে।

বাংলাদেশীদের শ্রমবাজার হিসেবেও সৌদি আরবের অবস্থান এখন শীর্ষে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এই পর্যন্ত (১৯৭৬-বর্তমান) অন্তত ৫৭ লাখ প্রবাসী কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন। বর্তমানে দেশটিতে কর্মরত রয়েছেন ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশী। ২০২৩ সালে সৌদি আরবের শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন অন্তত ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন বাংলাদেশী। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে গেছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৮৯৬ মিলিয়ন ডলার। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৮৭ মিলিয়ন ডলার।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে