ঢাকা, শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

এমপি মন্ত্রীদের আয়ত্তেই থাকছে উপজেলা

২০২৪ জুন ০৪ ২১:১৬:৪৩
এমপি মন্ত্রীদের আয়ত্তেই থাকছে উপজেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া এই নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে নৌকা প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলের মনোনীত কোনো প্রার্থী না থাকায় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা (এমপি) সহজেই নির্বাচনে প্রভাব ফেলেন।

ইতোমধ্যে অধিকাংশ উপজেলায় এমপিরা নিজের আত্মীয়স্বজন ও পছন্দের প্রার্থীদের জিতিয়ে এনেছেন।

শেষ হওয়া তিন ধাপের উপজেলা নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভোট হওয়া ৩৮২টি উপজেলার মধ্যে ৩০০টিতেই বিজয়ী হয়েছেন এমপি-মন্ত্রীদের পছন্দের প্রার্থী। এর মধ্যে ৩০টির বেশি উপজেলা মন্ত্রী-এমপির স্বজনেরা জিতেছেন। তবে হেরেছেন ১৮ জন স্বজন। হেরে যাওয়া স্বজনদের বেশির ভাগের ওপর স্থানীয় এমপির সমর্থন ছিল না।

এমনই একজন হলেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই হলেও ভাইয়ের সমর্থন না পাওয়ায় ভোটে ভরাডুবি হয় তাঁর। তবে এ রকম কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে বেশির ভাগ উপজেলায় উল্টোটা ঘটেছে।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন হারুন মজুমদার। একইভাবে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শিবলী নোমানী ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে এস এম আনোয়ার হোসেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। তাঁরা সবাই স্থানীয় এমপির লোক হিসেবে পরিচিত।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এমপিরা তৃণমূলে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা হওয়ার ক্ষেত্রে যাতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে না হয় সে জন্য উপজেলা নির্বাচনেও ছাড় দিচ্ছেন না তাঁরা।

আবার কিছু এমপি আছেন, যাঁরা সংসদীয় রাজনীতিতে উত্তরাধিকার তৈরি করার জন্য পরিবারের সদস্যদের উপজেলায় প্রার্থী করেছেন। এতে করে দলের অনেক ত্যাগী ও প্রবীণ রাজনীতিবিদও ছিটকে পড়েছেন।

বিষয়টি দল ও সরকারের জন্য বিব্রতকর বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

তিনি বলেন, বিষয়গুলো সরকারের জন্য অবশ্যই বিব্রতকর। কারণ, দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, এমপিদের পরিবারের সদস্যরা যাতে উপজেলায় নির্বাচন না করে এবং নির্বাচন প্রভাব বিস্তার না করে। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় এমপিরা সেটা লঙ্ঘন করেছেন। নিজেদের নিকটাত্মীয়দের জিতিয়ে এনেছেন। এটা তো সমর্থনযোগ্য নয়।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এমপিরা হয়তো মনে করছেন পছন্দের লোকদের নিয়ে এলে ক্ষমতা নিষ্কণ্টক থাকে, নিরাপদে থাকে। সামনে নির্বাচনে জয়যুক্ত হতে উপজেলা চেয়ারম্যানরা তাদের পক্ষে কাজ করবে। এই রকম চিন্তাচেতনা থেকে তাঁরা কাজ করছেন বলে মনে হয়।

এমপিরা যেসব উপজেলায় স্বজনদের প্রার্থী করেছেন, সেখানে তাঁরা বিভিন্নভাবে ভোটে প্রভাব বিস্তার করছেন বলেও মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। নোয়াখালীতে এ পর্যন্ত সাতটি উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে, যার মধ্যে তিনটিতে বিজয়ী হয়েছেন এমপির ছেলে।

তাঁদের মধ্যে হাতিয়া উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভা করে এমপির ছেলেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন, যাতে এমপির প্রভাব ছিল।

সুবর্ণচর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্ষীয়ান নেতা এ এইচ এম খায়রুল আনাম চৌধুরীকে পরাজিত করেন এমপিপুত্র। সেনবাগ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন এমপি মোরশেদ আলমের ছেলে সাইফুল আলম দিপু।

স্বজনদের নির্বাচনী ফলাফলেও এমপিদের প্রভাব ছিল দৃশ্যমান। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন স্বতন্ত্র এমপি ফয়সাল বিপ্লবের চাচা আনিছ-উজ জামান। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম সরকার কিশোর। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রায় ৮৫ হাজার ভোটে পরাজিত করেন।

বগুড়ার সারিয়াকান্দীতে এমপি সাহাদারা মান্নানের ছেলে ৩০ হাজারের বেশি ভোটে বিজয়ী হন। সাহাদারা মান্নানের ছেলে পান ৩৭ হাজার ২৪৮ ভোট। আর প্রতিপক্ষ পান ৬ হাজার ১৫৩ ভোট। পাবনার ভাঙ্গুড়ায় এমপি মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনাইন রাসেল প্রায় ২৯ হাজার ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে রাসেলের প্রতিপক্ষ পান মাত্র ২ হাজার ৬৭৯ ভোট। আর রাসেল পান ৩১ হাজার ৫৫৯ ভোট।

ছেলে দুইবারের পৌরসভা চেয়ারম্যান ছিলেন বলে উল্লেখ করে পাবনা-৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেন বলেন, সারা উপজেলার লোকেরা তাকে চেয়ে নিয়েছে (প্রার্থী করেছে)। সে পৌরসভাকে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য নির্বাচিত করেছিল। সেখানে সে সফল হয়েছিল। যার জন্য তাকে উপজেলায় মানুষ প্রার্থী করেছে।

জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নের ঝুঁকি এড়াতে এমপিরা নিজের পছন্দের লোককেই উপজেলায় বসাচ্ছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, স্থানীয় রাজনীতি পারিবারিকীকরণের মাধ্যমে এমপিরা ঝুঁকি এড়াতে চান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা দায়িত্বশীল ব্যক্তি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। জনগণের রায় যেখানে যাঁদের দিতে চায়, সেখানে দিতে দেওয়া উচিত। এখানে কোনো হস্তক্ষেপ আমাদের মতো দায়িত্বশীল জায়গা থেকে করা উচিত না। এগুলো আমরা সামলিয়ে উঠব।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে সবাই (এমপি) প্রভাব বিস্তার করেছে তা বলা যাবে না। কিছু ক্ষেত্রে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রমাণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সময় ফুরিয়ে আসছে না।

শেয়ারনিউজ, ০৪ জুন ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে