ঢাকা, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে বিএনপি

২০২৪ মে ২৫ ১২:২০:৪০
নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচনের আগের দুই বছর বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর হয়ে থেকেছে। দলটি আশা করেছিল বিশ্বের পরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ক্ষমতার পালা বদলে নিয়ামক হয়ে কাজ করবে। কিন্তু বিএনপির সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দলটির একচ্ছত্র নির্ভরতায় ভাটা পড়েছে।

সাম্প্রতিককালে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণার খবরে বিএনপির অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। নেতাকর্মীদের একটি অংশ ব্যাপক উচ্ছ্বসিত হলেও অপর অংশ একে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে ভাবছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে মার্কিননির্ভর হয়ে বড় ধাক্কা খাওয়ায় এখন আর পূর্বের অবস্থানে থাকতে চায় না দলটি। এবার নিজের শক্তির ওপর বেশি জোর দিতে চায় দলটি।

জেনারেল আজিজের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ্যে আসার পর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই নিয়ে এখনই আশাবাদী হতে চায় না তারা। এর কারণ, তারা মনে করছেন নির্বাচনের আগের দুই বছর মার্কিননির্ভরতা দলকে অনেক পেছনে ঠেলে দিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, নির্বাচন নিয়ে মার্কিনীরা যেভাবে তৎপর ছিল, এতে বিএনপির আশাবাদী না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী সময় আন্দোলনের বিষয়ে কোনো পরামর্শ পায়নি তারা। ফলে এক রকম বিনা বাধায় নির্বাচন সম্পন্ন করে ফের ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। এই জন্য শুধু বিদেশিদের ওপর আস্থা রাখাটা বিচক্ষণতা মনে করছেন না তারা।

রাজনীতিসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অতিমাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাজনীতির গতিপথ বিএনপিকে বেশ সংকটে ফেলেছে। মার্কিনীদের চাপে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন দিবে এবং বিএনপি ক্ষমতায় আসবে- এমন স্বপ্নে দলটি ঘোরের মধ্যে ছিল। বিদেশিনির্ভরতায় দলীয় নেতাকর্মীদের হিসাবের বাইরে রেখে বিদেশিদের ওপর ধরনা দিয়ে দল পরিচালনা হয়েছে। এর ফলে নেতাকর্মীদের একটি অংশ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাও হারিয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতার মতে, এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করার পর নেতারা একে সফলতা চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে ধরে নিয়েছিল। ধারণা ছিল, ভিসানীতির ফলে সরকারের ওপর স্যাংশন আসবে এবং তাদের ক্ষমতায় আসার রাস্তা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। সরকার পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনের দরকার হবে না, যা করার যুক্তরাষ্ট্রই করে দিবে।

কিন্তু নির্বাচনের আগে ও পরে সবাইকে হতাশ হতে হয়েছে। কারণ, নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছিল, তারাই বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে; সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এই জন্য বিদেশের ওপর আর আগের মতো আস্থা রাখার পক্ষে নয় দলের অনেকেই।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, শুধু বিদেশনির্ভরতা বিএনপির জন্য ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। আন্দোলনের মাঠে বেশিরভাগ নেতারা আড়ালে থেকে বিদেশের দিকে তাকিয়ে ছিল। এই জন্য পরবর্তী রাজনীতিও বেশ কঠিন হয়েছে।

বিএনপি সূত্রমতে, নির্বাচনের পর বিদেশিদের কার্যকরী কোনো উদ্যোগ না থাকায় বিএনপিকে শুধু হতাশই করেছে। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তারা। প্রতিবেশী ভারত বিরোধিতার কৌশল নেওয়ার ক্ষেত্রে একবার এগিয়ে আবার পিছিয়ে গেছে। চীনসহ পূর্বমুখী কূটনীতির দিকেও গুরুত্বের আলোচনা থাকলেও কার্যকরী কোনো উদ্যোগই দৃশ্যমান নয়। সবমিলিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতায় বিএনপি কোন পথে এগোবে, এই নিয়েও দলের অভ্যন্তরে নানা জটিলতা রয়েছে।

জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু‘র সর্বশেষ সফরে নতুন কোনো বার্তা আসে কিনা, তা নিয়েও আশায় ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিন্তু এই সফরে আশা সফল হওয়ার মতো কোনো বিষয় দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন নেতাকর্মীরা। তাই সর্বশেষ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার খবরে দলের সবাই আশাবাদী হতে পারছে না।

এই বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজিজের নিষেধাজ্ঞায় নেতাকর্মীদের খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এটি আরেকটি বিভ্রান্তি। এর আগে র‌্যাব ও পুলিশের ৯ কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু এতে সরকারের পতন হয়নি। সরকার পতনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। নিজের ঘর যদি নিজে সামলাতে না পারি, অন্য কেউ সামলিয়ে দেবে না।

শেয়ারনিউজ, ২৫ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে