ঢাকা, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

কর অব্যাহতি কমানোর উদ্যোগ এনবিআরের

২০২৩ নভেম্বর ১১ ১০:২৭:০০
কর অব্যাহতি কমানোর উদ্যোগ এনবিআরের

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর অব্যাহতির বর্তমান পরিস্থিতি ও নীতিসমূহ পর্যালোচনা করছে। ফলে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক করদাতারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কর অব্যাহতির কিছু সুবিধা হারাতে পারেন। কর অব্যাহতির একটি সুস্পষ্ট গাইডলাইন তৈরির উদ্দেশ্যে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করেছে এনবিআরের কর বিভাগ।

এ ধরনের অব্যাহতি প্রদানের বিষয়টি যাতে অবারিত না থাকে, সে বিষয়ে লক্ষ্য রেখে কেবলমাত্র যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অব্যাহতি পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে এ সুবিধা দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় শিল্পের এমন কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে দেওয়া শুল্ক সুবিধাও পর্যালোচনা করে কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। মূলত, স্থানীয় শিল্পকে উত্সাহ দিয়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পকে সমর্থন দেওয়ার অংশ হিসেবেই এ পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে কর ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা আলোচ্য সময়ের জিডিপির ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মেইড ইন বাংলাদেশ উদ্যোগের আওতায় পাঁচটি খাতকে কর অব্যাহতির আওতায় আনা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি, পোশাক ও টেক্সটাইল, অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ এবং হাইটেক শিল্প সম্মিলিতভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা কর ছাড় পেয়েছে, যা করব্যয় হিসেবেও গণ্য।

এ সময়ে মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স ও টেক্সটাইল প্রস্তুতকারক এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় স্থাপিত শিল্পকে সম্মিলিতভাবে আরো ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি করদাতারা ৪০ হাজার কোটি টাকার কর অব্যাহতি পেয়েছেন, একই সময়ে কোম্পানিগুলোর জন্য দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার একটি শর্ত হিসেবে, বাংলাদেশের কর ব্যয়কে সুবিন্যস্ত করার একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছে। বহুপাক্ষিক ঋণদাতাটি ২০২৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপি অনুযায়ী করের অনুপাত বার্ষিক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর শর্তও দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, কর অব্যাহতির সুবিধা নানাভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে। তবে স্থানীয় শিল্পকে সুবিধা দেওয়া, পিছিয়ে পড়া এলাকায় শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করা, নতুন ধরনের বা হাইটেক শিল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করতেও কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

আবার অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো শিল্প নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে কিংবা অনৈতিক উপায়েও এ ধরনের কর অব্যাহতির সুবিধা নিচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। কর ব্যয় সম্পর্কে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনবিআর। ১০২টি খাত বর্তমানে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি পাওয়ার তথ্য এতে উঠে এসেছে। এর মধ্যে ৪০টি খাতে ব্যক্তি করদাতাদের অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে, বাদবাকিগুলোতে আংশিক বা পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে কোম্পানি, শিল্প বা বিনিয়োগের জন্য।

এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার আয়কর ছাড় দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৬৮ শতাংশ বা ৮৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার করপোরেট কর ছাড় দেওয়া হয়। বাকি প্রায় সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার ছাড় দেওয়া হয় ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতাদের। হিসাবটি করা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়কর ধরে। এনবিআর বলছে, ছাড় দেওয়া আয়করের পরিমাণ ঐ বছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশের সমান।

কোন খাতে কত অব্যাহতি

এনবিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করপোরেট করের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর ছাড় পায় ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা। তারা বছরে ছাড় পায় ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এরপর ছাড় পায় বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাত। এ খাতের কর ছাড়ের পরিমাণ ৮ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাত পায় ৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার সুবিধা। ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতাদের মধ্যে প্রবাসী আয় খাতে সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকার কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পোলট্রি ও মাছ চাষের সঙ্গে জড়িতদের ২ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা এবং শেয়ার-বাজারে বিনিয়োগে ৯৬৫ কোটি টাকার কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।

শেয়ারনিউজ, ১১ নভেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে