ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদন

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২৯ ১৪:৪১:৫৮
নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের কর্মীদের ব্যাপক দমনপীড়নের অভিযোগ করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মামলা রয়েছে।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্বাচন-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে এসব ভুয়া মামলা করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মামলাগুলোর উদ্দেশ্য হলো সম্ভাব্য প্রার্থীদের আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের অযোগ্য ঘোষণা করা। প্রতিবেদনটি শেয়ারনিউজ পাঠকদের জন্য ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।

আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দমন-পীড়নের অভিযোগ ততই ঘনিয়ে আসছে। দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতারা অভিযোগ করেছেন যে হাজার হাজার দলীয় কর্মী ও সমর্থক সহিংসতার "কাল্পনিক" মামলার মুখোমুখি হয়েছেন।

বিএনপির তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচনে সম্ভাব্য বিএনপির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বা ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের দায়ের করা ডজন ডজন মামলা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার জন্যই এসব ভুতুড়ে মামলা করা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করাই মামলাগুলোর উদ্দেশ্য।’ তার মত ‘সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সব রকমের চেষ্টা করছে।’

এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলে তারা। বর্তমান সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ বারবার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

গত কয়েক মাস ধরে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদলগুলো রাজনৈতিক সমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশে তারা আগামী নির্বাচনের আগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছে। যদিও সরকার এ দাবি মানেনি। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছে, রাজনৈতিক সমাবেশে পুলিশ ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা করছে।

এছাড়া নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা-নাশকতার মিথ্যা মামলাও করা হচ্ছে। বিএনপির কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩৮ হাজার মামলা করা হয়েছে।

নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা:

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে ৫০টি মামলা রয়েছে। তিনি প্রতিদিন আদালতে যান বলে জানান। সোহেল বলেন, ‘গত তিন মাস ধরে আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আদালতেই থাকছি। প্রতিদিন চার থেকে ছয়টি মামলার শুনানিতে অংশ নিচ্ছি। আমার দলের অনেক সিনিয়র সহকর্মীরও আদালতে একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’

এর আগে তিনি সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণেও বাধা দেওয়া হয় তাকে।’ তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। এখন তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিএনপির অন্তত ৪৪ জন সিনিয়র নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে ২০০টিরও বেশি মামলা দ্রুত পরিচালনা করা হয়েছে। এসব বিচারের লক্ষ্য আসন্ন সময়ের মধ্যে আসামি বিএনপি নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করা এবং পরবর্তী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।’

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেছেন, ‘পুলিশ ‘কখনোই’ এমন ‘ভুয়া’ মামলা করে না। যখন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধে যুক্ত থাকার প্রমাণ থাকে তখনই পুলিশ মামলা করে। তারা (বিরোধীদল) রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে ভাঙচুর ও সহিংসতায় জড়িত। পুলিশের ওপরও হামলা চালানো হচ্ছে। আইন মেনেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। আমাদের বাহিনী আইনের প্রতি দায়বদ্ধ থেকেই সবসময় কাজ করে।’

২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ঘোষণা করেছে, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় বর্তমান ও প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসব ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন।

যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নাশকতার ষড়যন্ত্র করে, তাহলে বাংলাদেশিরাও তাদের ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপ’ করবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণই আমাদের দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। আমরা আসলেই চাই বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক’।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার ও পুলিশ প্রশাসনকে কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে ব্যবহার করবে তার নীলনকশা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দল।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে জামালপুরের জেলা প্রশাসক ক্ষমতাসীন দলকে ভোট দেওয়ার জন্য জনগণকে খোলাখুলি আহ্বান জানিয়েছিলেন। একটি ফাঁস হওয়া টেলিফোন কথোপকথনে শোনা যায়, রাজশাহীর একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছেন, তাকে সম্প্রতি একজন মন্ত্রী সেখানে বদলি করেছেন যাতে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জয়লাভ করতে পারে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে সরকার আগামী নির্বাচনে বড় কারচুপির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা যদি এমন একটি সাজানো ও পাতানো নির্বাচনে অংশ নেই তাহলে সেটা হবে অপরাধ সমর্থন করার নামান্তর।’

শেয়ারনিউজ, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে