ঢাকা, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

কেন প্রতিটি মুসলমানের কোরআনের সঙ্গে বন্ধন জরুরি?

২০২৫ ডিসেম্বর ২৪ ১১:৫২:৪৮
কেন প্রতিটি মুসলমানের কোরআনের সঙ্গে বন্ধন জরুরি?

নিউজ ডেস্ক: মানুষের জীবনে এমন কিছু আমানত রয়েছে, যা কেবল দুনিয়ার জন্য নয়, বরং আখিরাতের চূড়ান্ত ফয়সালার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। কোরআন তেমনই এক মহাগ্রন্থ, যা কিয়ামতের দিন মানুষের ঈমানের পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। দুনিয়ায় আল্লাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে জান্নাতে প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে বিশেষ সম্মান লাভ—সবকিছুর সঙ্গেই কোরআনের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই কোরআন পড়া, বোঝা এবং তা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা প্রত্যেক মুসলমানের মৌলিক দায়িত্ব।

কোরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা কেবল একটি ধর্মীয় অভ্যাস নয়, বরং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার একটি পরীক্ষিত পথ। নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত, আয়াত নিয়ে চিন্তা করা এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগের চেষ্টা মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে। এই সম্পর্ক দৃঢ় হওয়ার পেছনে রয়েছে একাধিক মৌলিক ও ঈমানি কারণ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, দ্বীন মূলত আন্তরিকতার নাম। সেই আন্তরিকতা আল্লাহ, তাঁর রাসুল, মুসলিম সমাজ এবং বিশেষভাবে আল্লাহর কিতাবের প্রতিই নিবেদিত। আল্লাহর কিতাবের প্রতি আন্তরিকতার অর্থ হলো নিয়মিত কোরআন পাঠ করা, শুদ্ধভাবে পড়তে তাজবিদ শেখা, তাফসির জানা এবং নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট বোঝার চেষ্টা করা। একই সঙ্গে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে কোরআন আল্লাহর অবতীর্ণ বাণী—মানুষের তৈরি কোনো গ্রন্থ নয়। এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং অন্যদের শেখানোও এই দায়িত্বের অংশ।

এই কারণেই কোরআন পড়া ও তা নিয়ে চিন্তা করা নিছক পাঠ নয়; এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইবাদত, যার জন্য আল্লাহ বিশেষ প্রতিদান নির্ধারণ করেছেন।

আখিরাতে কোরআনের ভূমিকা আরও গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে প্রমাণ হিসেবে দাঁড়াবে। অর্থাৎ, যারা কোরআনকে জীবনের সামনে রাখে, তাদের জন্য এটি জান্নাতের পথে পথপ্রদর্শক হবে। আর যারা কোরআনকে অবহেলা করে, আদেশ অমান্য করে বা পেছনে ফেলে রাখে, তাদের জন্য তা জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) কোরআনকে সুপারিশকারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন—যার সুপারিশ আল্লাহ গ্রহণ করেন। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আত্মসমালোচনার প্রশ্ন আসে—আমরা কোরআনের সঙ্গে কেমন আচরণ করছি? আমরা কি কোরআনকে কেবল তিলাওয়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি, নাকি তা নিয়ে গভীর চিন্তা করছি?

কোরআনের মর্যাদা কেবল আখিরাতে সীমাবদ্ধ নয়; দুনিয়াতেও এটি মানুষের সম্মান ও অবস্থান নির্ধারণ করে। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত একটি ঘটনায় দেখা যায়, খলিফা ওমর (রা.) একজন মুক্তদাসকে শুধু কোরআনের জ্ঞান ও দ্বীনি প্রজ্ঞার কারণে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি তখন স্মরণ করিয়ে দেন—আল্লাহ এই কিতাবের মাধ্যমে কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেন, আবার কাউকে অবনত করেন।

জান্নাতের মর্যাদা নির্ধারণেও কোরআনের ভূমিকা অনন্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়, সে-ই সর্বোত্তম। অন্য হাদিসে এসেছে, জান্নাতে কোরআনের সঙ্গীকে বলা হবে—পড়তে থাকো এবং স্তরে স্তরে উপরে উঠতে থাকো। দুনিয়ায় যে আয়াত পর্যন্ত পড়েছিলে, জান্নাতে তোমার অবস্থান হবে ঠিক সেই আয়াত পর্যন্ত।

সব মিলিয়ে স্পষ্ট হয়, কোরআন একজন মুসলমানের জন্য কেবল পাঠ্য নয়, বরং জীবনব্যবস্থা। নিয়মিত আরবি তিলাওয়াতের সঙ্গে সঙ্গে মাতৃভাষায় অর্থ বোঝার চেষ্টা করা জরুরি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে কোরআনের সঙ্গে সময় কাটানো—হোক তা ফজরের পর কিংবা দিনের অন্য কোনো সময়ে—এই সম্পর্ককে দৃঢ় করে। পাশাপাশি কোনো আলেম বা কোরআন অধ্যয়নচক্রের সঙ্গে যুক্ত হলে উপলব্ধি আরও গভীর হয়।

কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক মানে শুধু ইবাদত নয়; এটি দুনিয়ার পথচলায় সঠিক দিকনির্দেশনা এবং আখিরাতের চূড়ান্ত মুক্তির নিশ্চয়তা।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে