ঢাকা, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

‘বাবা যাও, তোমার সঙ্গে বেহেশতে দেখা হবে’

২০২৫ নভেম্বর ২৩ ১৬:০৬:৩১
‘বাবা যাও, তোমার সঙ্গে বেহেশতে দেখা হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বংশালের কসাইটুলিতে ভূমিকম্পে নিহত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি (২৩)–কে শেষ বিদায় জানালেন তাঁর মা নাসরিন জাহান নিপা। এদিন হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছেলের মরদেহ স্পর্শ করে মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে উচ্চারণ—“বাবা যাও, তোমার সঙ্গে বেহেশতে দেখা হবে।”

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে রাফি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হন তাঁর মা। মায়ের অস্ত্রোপচার চলছিল, আর ঠিক সেই সময় পাশের বেডে পড়ে ছিল ছেলের নিথর দেহ—এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সাক্ষী ছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বজনরা।

শনিবার (২২ নভেম্বর) বাদ আসর রাফিকে বগুড়া শহরের নামাজগড় আঞ্জুমান-ই গোরস্থানে দাফন করা হয় দাদা ও চাচার কবরের পাশে। এর আগে বাদ জোহর সুত্রাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর রাফির মরদেহ বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন মা নিপাকে হুইলচেয়ারে করে ছেলের কফিনের কাছে আনা হয়। সেখানে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি ভেঙে পড়েন। স্বজন ও উপস্থিত সবাইনের চোখ ছলছল করে ওঠে।

মা নিপা অনুরোধ করেন, কবরের ভেতরে ছেলেকে নামানোর কাজটি চাচা মামুন মোরশেদ টুলু ও মামা নাহিয়ান ইসলাম অন্তর যেন করেন।

ছেলের কফিন ছুঁয়ে নিপার প্রার্থনা—“হে আল্লাহ, আমার ছেলেকে বেহেশতের সর্বোচ্চ জান্নাত নসিব করো।”মায়ের এই বুকফাটা আহাজারিতে আশপাশের সবাই কাঁদতে থাকেন।

রাফির চাচা আব্দুস সালাম রুবেল জানান, শুক্রবার সকালে মা-ছেলে বাজার করতে বংশালের কসাইটুলিতে যান। গোশতের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ভূমিকম্প শুরু হয়। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে পাশের পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে রাফির মাথা ও বুকে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

মা নিপার হাত, কাঁধ ও চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। চিকিৎসকরা রাফিকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সময় রাফির বাবা, অধ্যক্ষ ওসমান গণি রুস্তম, বগুড়ার বাড়িতে ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় রওনা দেন। রাফির মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই বগুড়ার সুত্রাপুরের ‘রমিছা ভিলা’তে ভিড় করেন স্বজন, প্রতিবেশী ও সহপাঠীরা।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মা নিপা শারীরিকভাবে আশঙ্কামুক্ত হলেও ছেলের মৃত্যু তাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলেছে।

বাদ আসর বগুড়ার নামাজগড় আঞ্জুমান-ই গোরস্থানে দাদা ও চাচার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়—মায়ের অশ্রুসিক্ত চোখে শেষ বিদায়।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে