ঢাকা, বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

বিএনপির হারিয়ে যাওয়া ১০ বাঘা নেতা

২০২৫ আগস্ট ২৭ ১২:১৮:০০
বিএনপির হারিয়ে যাওয়া ১০ বাঘা নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), যেটি ১৯৭৮ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। দলটির নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, গত প্রায় দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, গুম, বিচারিক হয়রানি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন বিএনপি নেতারা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ ও জনপ্রিয় নেতা এসব দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন, যাদের অনেকে কারাগারে, অনেকে বিদেশে, কেউ কেউ হারিয়ে গেছেন, আবার কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন।

১. সাদেক হোসেন খোকা

প্রখ্যাত রাজনীতিক, মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধা খোকা বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছেন এবং প্রবাসে অবস্থানকালে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন।

২. সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী)

চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতা, যিনি বিএনপিকে ওই অঞ্চলে শক্ত ঘাঁটি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০১৫ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত হয়ে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন। তার বিচারকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

৩. আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া

দীর্ঘদিন দলের মহাসচিব ও মন্ত্রী ছিলেন। ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংস্কারপন্থী অবস্থান নেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন। ২০১০ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

৪. হারিস চৌধুরী

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় মারা যান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

৫. হান্নান শাহ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ছিলেন। ২০০৭ সালের রাজনৈতিক সংকটে দলের নেতৃত্বে ছিলেন এবং জেল-হয়রানির শিকার হন। ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

৬. তরিকুল ইসলাম

বিএনপির দুঃসময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যশোরে বিএনপিকে সংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ২০১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

৭. মওদুদ আহমদ

একাধিকবার মন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতিতে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি উভয়ের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পর ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

৮. নাসির উদ্দিন পিন্টু

ঢাকা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবার মৃত্যুকে ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করে।

৯. ইলিয়াস আলী

সিলেট অঞ্চলের বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক সাংসদ। ২০১২ সালে ঢাকায় ‘নিখোঁজ’ হন। আজও তার সন্ধান মেলেনি। বিএনপি ও তার পরিবার দাবি করে, তাকে ‘গুম’ করা হয়েছে।

১০. লুৎফুজ্জামান বাবর

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় হস্তক্ষেপের চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে।

বিএনপি বারবার দাবি করে আসছে, তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা ও বিচার একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। তবে সরকার পক্ষ বলছে, এসব অপরাধের পেছনে বাস্তব তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, এবং আইনের নিয়মেই বিচার হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো রাজনৈতিক বিরোধ নিরসনে স্বচ্ছ বিচার, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং রাজনৈতিক সংলাপ জরুরি। কারণ, বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হলে তা দীর্ঘমেয়াদে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে