ঢাকা, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

সাবেক সেনাপ্রধানকে নিয়ে ইকবালের ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তা ফাঁস

২০২৫ আগস্ট ১৭ ১০:৫০:২৭
সাবেক সেনাপ্রধানকে নিয়ে ইকবালের ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তা ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া তার ফেসবুক পোস্টে মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেন, র‍্যাবে কর্মরত থাকাকালে জিয়াউল বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বারবার পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল।

ইকবাল করিম ভূঁইয়া তার পোস্টে লেখেন,“র‍্যাবে প্রেষণে থাকা অফিসারদের অনেকেই এমন আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠত যেন তারা পেশাদার খুনি। বিশেষ করে জিয়াউল আহসানকে নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম।”

তিনি উল্লেখ করেন, সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি র‍্যাবে থাকা সেনা সদস্যদের ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাতে সম্মতি প্রকাশ করেছিলেন। তবে বাস্তবে সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।

ইকবাল করিম ভূঁইয়া আরও জানান, তিনি কর্নেল (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল) মুজিবকে ডেকে জিয়াউল আহসানকে ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখার নির্দেশ দেন এবং যেন আর কোনো ‘ক্রসফায়ার’ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেন। কিছুদিন সংবাদমাধ্যমে ‘ক্রসফায়ারের’ খবর না থাকায় স্বস্তি পেলেও পরে বুঝতে পারেন এসব ঘটনা গোপন রাখা হচ্ছিল।

আর্মি নিরাপত্তা ইউনিটের (ASU) একাধিক কর্মকর্তার বর্ণনা অনুযায়ী, জিয়াউলের আচরণ দিন দিন আরো উগ্র হয়ে উঠছিল। তার বাসায় অস্ত্র, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং গার্ড রাখার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানালে সে নির্দেশ মানেনি। ASU কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজল বলেন,“তার সঙ্গে কথা বলাটা যেন ইট বা পাথরের সঙ্গে কথা বলার মতো—কোনো যুক্তিই সে গ্রহণ করত না।”

জিয়াউল আহসানকে নিয়ে করা তদন্তে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার পেছনে সবচেয়ে আলোচিত নাম তিনি। গুম কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তার নেতৃত্বাধীন টিমই সবচেয়ে বেশি গুম করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই গুমের পর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে প্রায় ১,০৩০ জন মানুষকে গুম ও হত্যা করা হয়েছে। এই অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর গণহত্যা, ২০১৪ সালের নারায়ণগঞ্জ ৭ খুন, এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত রাজনৈতিক নিধনযজ্ঞ।

জিয়াউল আহসানের ক্ষমতার পেছনে ছিল সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিকের ছায়া। অভিযোগ রয়েছে, তারিক সিদ্দিকের নির্দেশেই জিয়াউল বিভিন্ন ‘অপারেশন’ পরিচালনা করতেন। গুম কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, অনেক সময় শেখ হাসিনার নির্দেশেই গুম-হত্যা সংঘটিত হতো এবং জিয়াউল সেই ‘সুপিরিয়র কমান্ড’ অনুসরণ করতেন।

জিয়াউল আহসানের চাকরিজীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

কোর্স: ২৪তম লং কোর্স, সেনাবাহিনী

পরিচিতি নম্বর: বিএ-৪০৬০

র‍্যাবে যোগদান: ২০০৯, র‍্যাব-২ এর টুআইসি

পরবর্তী পদ: র‍্যাব গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান → অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ADG)

অভিযান: শাপলা চত্বর (২০১৩), নারায়ণগঞ্জ ৭ খুন (২০১৪)

পরবর্তী পদ: এনএসআই পরিচালক, এনটিএমসি মহাপরিচালক

পদোন্নতি: শেষ পর্যন্ত মেজর জেনারেল

বর্তমানে তিনি বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন এবং সেনানিবাসের নির্দিষ্ট এলাকায় অবাঞ্ছিত হিসেবে তালিকাভুক্ত। সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া জানান, এমন একজন কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছিলেন।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে