ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হওয়ার পক্ষে বিএনপি

২০২৫ জুলাই ২২ ২২:৪৪:৩২
একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হওয়ার পক্ষে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান এক ব্যক্তি হতে পারবেন কিনা, এই নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এক ব্যক্তি হওয়া নিয়ে মোটামুটি একমত সবাই।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ১৭তম দিনের আলোচনা শেষে এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি মনে করে, ৭০ অনুচ্ছেদে (সংসদ সদস্য কর্তৃক দলের বিরুদ্ধে ভোটদানের বিষয়ে) একটি 'ডিসেন্ট নোট' (ভিন্নমত) রাখা উচিত। এর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই ঠিক করবে কে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হবেন।

তার মতে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে কাউকে দলীয় প্রধান হতে না দেওয়া তার গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার শামিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান এক ব্যক্তি হতে কোনো বাধা নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এটি সংসদীয় পার্টি বা জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর নির্ভরশীল।

এছাড়া, কোনো প্রধানমন্ত্রী যদি অল্প সময়ের জন্য পদে থাকেন, তাহলে তিনি দলীয় প্রধান হিসেবে থেকে যেতে পারেন এবং অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তাই এখানে বাধ্যবাধকতা না থাকাই ভালো বলে মত দেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই প্রক্রিয়া নিয়েও বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, পাঁচ সদস্যের একটি সার্চ কমিটির প্রস্তাব এসেছে, যেখানে সরকারি দলের প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার, বিরোধী দল থেকে বিরোধী দলীয় নেতা ও ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন সদস্য থাকবেন। এই কমিটি সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর কাছ থেকে নাম আহ্বান করবে, যার মধ্যে সরকারি দল, বিরোধী দল এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও নাম দিতে পারবেন।

যদি সার্চ কমিটি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে ঐকমত্যে আসতে না পারে, তাহলে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে যাওয়া হবে। এই পদ্ধতিতে সার্চ কমিটির কাছে সরকারি দল ও বিরোধী দল পাঁচজন করে দশজনের নাম এবং তৃতীয় দল দুজনের নাম প্রস্তাব করবে। এই বারোজন ব্যক্তির মধ্য থেকে বাছাই কমিটি যদি ঐকমত্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করতে পারে, তবে তা ভালো। তবে, আজকের বৈঠকে এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি।

যদি এই পদ্ধতিতেও ঐকমত্য না হয়, তাহলে ঐকমত্য কমিশন থেকে র‍্যাঙ্ক চয়েজ ভোটিংয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব এসেছে, যদিও এই বিষয়েও বৈঠকে ঐকমত্য হয়নি।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, যদি বাছাই কমিটির মাধ্যমে ঐকমত্যে আসা না যায়, তাহলে বিএনপির প্রস্তাবে সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান আছে, তা অনুসরণ করা হবে। তবে, রাষ্ট্রপতিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের বিধানটি বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন বাছাই কমিটি ও ত্রয়োদশ সংশোধনীর মধ্যবর্তী অন্য কোনো বিধান খুঁজে দেখছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যকর হলে সংবিধানের ১২৩(৩) ধারা (সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন হলে আগের সংসদের সদস্যদের বহাল থাকার বিতর্কিত বিধান) এবং ৭২(১) ধারা (অধিবেশন আহ্বান নিয়ে ৬০ দিনের সময়সীমা) সংশোধনের প্রয়োজন হবে। বিএনপির মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যকর হলে এই অনুচ্ছেদগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধিত হবে এবং এতে কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক নেই।

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও, বিএনপি আজ এতে অংশ নেয়নি। সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, তারা আগামীকালের আলোচনায় এ বিষয়ে মতামত দেবেন।

সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, "আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বসম্মতি সবসময় সহজ হয় না। তবে ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সময় যেভাবে তিনদলীয় ঐকমত্য হয়েছিল, তা সফল হয়েছিল।"

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আলোচনা ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে আবারও একমত হওয়া সম্ভব। সালাহ উদ্দিন বলেন, "আমরা চাই বিভক্তি নয়, ঐকমত্য। বিভক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত হলে ভবিষ্যতে প্রশ্ন থেকেই যাবে।"

মামুন/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে