ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

কমছে না চাপ, নিয়ন্ত্রণহীন কয়েকটি সূচক

২০২৫ জুলাই ১৩ ১১:০২:২৫
কমছে না চাপ, নিয়ন্ত্রণহীন কয়েকটি সূচক

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে বেশ জটিল এবং সংকটপূর্ণ। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে অসামঞ্জস্য, মূল্যস্ফীতি, উৎপাদন খাতে অনিশ্চয়তা এবং রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি—সব কিছু মিলে দেশের অর্থনীতির অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

১. আয় এবং ব্যয়ের অসমতা:

অর্থনীতিবিদরা যেমন বলেছেন, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ অস্বস্তিতে রয়েছেন, অন্যদিকে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকের আয় থেকে খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। সরকারি হিসেবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে বলে জানা গেলেও, বাজারের বাস্তবতা ভিন্ন—বিশেষত চাল, পেঁয়াজ, সবজি এবং মাছের দাম বাড়তি।

২. বাজারে বাড়তি চাপ:

টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী, চালের দাম ৪ শতাংশ এবং পেঁয়াজের দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে। এসব দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে নাভিশ্বাস ফেলছেন। অন্যদিকে, সেবামূল্যও মানুষের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে।

৩. অর্থনৈতিক স্থবিরতা:

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে এবং শঙ্কাগ্রস্ত। বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট, উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অবকাঠামোগত শঙ্কার কারণে উৎপাদন খাতেও অগ্রগতি হয়নি। এই সংকটের কারণে অনেক উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী উৎপাদন বাড়াতে পারছেন না।

৪. রাজস্ব ঘাটতি:

গত অর্থবছরে দেশের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, তবে আদায় হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ে ৯৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।

৫. শেয়ারবাজারের অবস্থা:

দেশের শেয়ারবাজারও ভালো অবস্থায় নেই। বিনিয়োগকারীরা অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শেয়ারবাজারে এই পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, কারণ এটি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে প্রভাবিত করছে।

৬. বিদেশি শুল্কারোপ এবং রিজার্ভ:

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপের কারণে দেশের পোশাক খাতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে, প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে রিজার্ভ কিছুটা বাড়লেও, তা ধরে রাখার প্রশ্ন এখন চর্চায় রয়েছে। বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২৪.৪৫ বিলিয়ন ডলার হলেও, এটি কতটুকু টেকসই হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

৭. রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়ন:

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমাদের রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়াগুলি আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। গত ১০ বছর ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি এবং দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় সংকট রয়েছে। লোকবল এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কার্যকরী সংস্কারের প্রয়োজন।

৮. শিল্প খাতের সমস্যা:

বিশেষত পোশাক খাত এবং অন্যান্য উৎপাদন খাতে বিদ্যুৎ সংকট এবং উচ্চ উৎপাদন খরচের কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। স্পিনিং, টেক্সটাইল এবং ফেব্রিক প্রস্তুতকারকদের উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে, যা দেশের রপ্তানি খাতে ক্ষতি করতে পারে।

দেশের অর্থনীতি বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখে, যেখানে বিভিন্ন খাতে সঙ্কটের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, উৎপাদন খাতের উন্নয়ন, এবং বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করাও এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয়।

এসব সমস্যা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরী পদক্ষেপ এবং সময়মতো বাস্তবায়ন অবশ্যই প্রয়োজন।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে