ঢাকা, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

সুর বদল ভারতের, ড. ইউনূসকে নিয়ে নতুন মোড়

২০২৫ জুলাই ০৯ ১১:১৪:২০
সুর বদল ভারতের, ড. ইউনূসকে নিয়ে নতুন মোড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকেই গণমাধ্যম, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে গুজব, অপপ্রচার আর মতের আমূল পরিবর্তনের এক আশ্চর্য মহোৎসব। আর এই বদলের কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস।

এক সময় যাকে ঘিরে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম ছড়িয়েছিল অসংখ্য মিথ্যা অভিযোগ ও নেতিবাচক প্রচার, আজ সেই ইউনূসকেই তারা তুলে ধরছে দেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে।

হেডলাইন বদল, সুর বদল

"Yunus Brings Billion-Dollar Investment to Bangladesh", "End of Hasina Era"—এমনই সব শিরোনামে সেজেছে ভারতের একসময়ের 'গদি-মিডিয়া' হিসেবে পরিচিত চ্যানেলগুলো। যেসব চ্যানেল এক সময় শেখ হাসিনার গুণগানে ব্যস্ত ছিল, তারা এখন ইউনূসের নেতৃত্বে চীনের ১০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আগ্রহের কথা বলছে।

ভারতের জনপ্রিয় চ্যানেল ETV জানিয়েছে, ড. ইউনূসের কূটনৈতিক দক্ষতার ফলেই এসেছে ৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ। রিপাবলিক বাংলা, জি ২৪ ঘন্টার মতো চ্যানেলগুলোর প্রতিদিনের প্রতিবেদনেও এখন ইউনূস বন্দনা স্পষ্ট।

রাজনীতিতেও পাল্টে গেছে সুর

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বদল এসেছে। জি ২৪ ঘন্টা সম্প্রতি প্রচার করেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার ভিডিও, যেখানে ড. ইউনূসকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিতে দেখা যায়। তারা এটিকে "সন্ত্রাসী মনোভাবের প্রকাশ" হিসেবে চিহ্নিত করেছে—যেটি এক সময়ের আওয়ামী লীগঘেঁষা মিডিয়ার ভাষায় এক বিরল দৃশ্য।

সমালোচকদের চোখে ষড়যন্ত্রের আভাস

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছক কোনো নৈতিক জাগরণ নয়। বরং রাজনৈতিক বাস্তবতা ও টিআরপি রক্ষা করতেই মিডিয়াগুলো এভাবে ভোলবদল করছে। শেখ হাসিনার দল এখন নিষিদ্ধ, তার বিরুদ্ধে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও প্রায় ২৫০টি হত্যা মামলার অভিযোগ। এমন এক নেত্রীর পক্ষ নেওয়া ভারতীয় মিডিয়ার জন্য হয়ে উঠেছিল বুমেরাং।

বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলার পর তারা এখন ইউনূসপন্থী সুরে কথা বলছে—অনেকে বলছেন, এটা ভবিষ্যতের সরকারপন্থী সুরে নিজেদের আগে থেকেই প্রস্তুত করার চেষ্টামাত্র।

প্রশংসা, না কি কৌশল?

টুইটার ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভারতীয় দর্শক মজা করে লিখছেন, "Glad the media is finally waking up to the truth." তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এটা কি সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা, না কি নতুন ষড়যন্ত্রের সূচনা?

ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বরাবরই ছিলেন সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য। তাঁর নোবেলজয়, গ্লোবাল নেতৃত্ব ও পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাব বরাবরই দৃশ্যমান। তাহলে কেন এতদিন তাকে নিয়ে ছড়ানো হয়েছিল প্রোপাগান্ডা?

সমালোচকদের একাংশ মনে করেন, এটি "ঝোপ বুঝে কোপ মারা"র কৌশল মাত্র। ভারতীয় মিডিয়াগুলো এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রভাব টের পেয়ে আগেভাগে নিজেদের অবস্থান ঠিক করছে।

নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট, বদলে গেছে মিডিয়ার চরিত্রও। এখন দেখার বিষয়—এই প্রশংসা কি সত্যিকার স্বীকৃতি, নাকি আরও গভীর ষড়যন্ত্রের নতুন সূচনা? আপাতত নিশ্চিত কিছু বলা না গেলেও, বলা যায়—দাদাবাবুরা সত্যিই ঘুরে গেছেন পুরো ৩৬০ ডিগ্রি।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে