ঢাকা, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

বিতর্কের মুখে টেলিযোগাযোগ খাত

২০২৫ জুলাই ০৫ ১৬:৫৪:৩৭
বিতর্কের মুখে টেলিযোগাযোগ খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এপ্রিল মাসে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি নতুন খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করেছে, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আরও উন্মুক্ত করা হয়েছে। এতে বিদ্যমান বহুস্তর ভিত্তিক বিভিন্ন লাইসেন্সের পরিবর্তে তিন স্তরের লাইসেন্স কাঠামোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। তবে এই উদ্যোগকে ঘিরে নানামুখী বিতর্ক ও উদ্বেগও দেখা দিয়েছে।

তিনটি প্রধান লাইসেন্স ক্যাটাগরি:

১. অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এনএনএসপি) – মোবাইল ও ফিক্সড ফোন অপারেটরদের জন্য।

২. ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি) – ফাইবার, টাওয়ার ও ব্যাকহল নেটওয়ার্কের জন্য।

৩. ইন্টারন্যাশনাল কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি) – আন্তর্জাতিক ভয়েস ও ডেটা সংযোগের জন্য।

বর্তমানের ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (নিক্স), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইডিডব্লিউ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এই চারটি অপারেটরের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষে বাতিল হবে। তবে নির্ধারিত শর্ত মেনে তারা নতুন লাইসেন্স কাঠামোর আওতায় যেতে পারবে।

২০২৭ সালের মধ্যে সকল বিদ্যমান লাইসেন্সধারীদের নতুন কাঠামোর অধীনে স্থানান্তরিত হতে হবে। নতুন নীতিমালায় স্থানীয় পর্যায়ের ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবা প্রদানকারীদের জন্য ‘স্মল আইএসপি সার্ভিস’ এবং ‘স্মল টেলিকম সার্ভিস’ নামে দুটি এনলিস্টমেন্ট ক্যাটাগরি প্রস্তাব করা হয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় কিছু সেবাকে লাইসেন্সের আওতা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। যেমন: কল সেন্টার, ভেহিকেল ট্র্যাকিং সেবা এবং টেলিকম খাতের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (টিভ্যাস)।

জাতীয় আইএসপি লাইসেন্সে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ এবং স্থানীয় আইএসপি লাইসেন্সে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মালিকানা রাখা যাবে।

মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) আপাতত স্বতন্ত্র লাইসেন্স হিসেবে থাকবে, তবে ভবিষ্যতে এনআইসিএসপি লাইসেন্সে রূপান্তরের সুযোগ থাকবে।

বিটিআরসি নির্ধারিত সেবার গুণগত মান (কিউওএস) মেনে চলতে হবে; নির্দিষ্ট পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর পূরণে ব্যর্থ হলে লাইসেন্স বাতিলের ঝুঁকি থাকবে।

অবকাঠামো ভাগাভাগি নিশ্চিত করতে ফাইবার, টাওয়ার, ডেটা সেন্টার ও রেডিও নেটওয়ার্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে।

স্থানীয় টেলিকম ও আইজিডব্লিউ অপারেটররা নতুন নীতিমালা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আইজিডাব্লিউ অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) সভাপতি আসিফ সিরাজ রব্বানী বলেন,“এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে টেলিকম খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, হাজার হাজার কর্মী বেকার হবেন এবং সরকার বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।”

ন্যাশনওয়াইড টেলিকম ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক কোম্পানির চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী বলেন,“মাঝারি স্তরের অপারেটররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ছোট আইএসপিরা ব্যবসায়িকভাবে সংকটে পড়বে।”

টেলিকমিউনিকেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার অপারেটর অব বাংলাদেশের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান আশঙ্কা প্রকাশ করেন,“দেশের বাজারে বিদেশি অপারেটরদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।”

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম বলেন,“স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা নেই।”

বিএনপি এই নীতিমালা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,“নতুন নীতিমালায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বাজারে বিদেশি কোম্পানির আধিপত্য বাড়বে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই নীতিমালা একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন নয়।”

মোবাইলফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব অভিযোগ অস্বীকার করেছে যে, নতুন নীতিমালায় মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তারা বলেছে, ২০০৭ সালের নীতিমালা নানা বাধা সৃষ্টি করেছিল।

একজন বেসরকারি মোবাইল কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বললেন,“এটি সময়োপযোগী ও সাহসী উদ্যোগ।সব পক্ষকে নিয়ে বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা গড়ে তোলা উচিত।”

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টা ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন,“বহুস্তর লাইসেন্স কাঠামো এ খাতের উন্নয়নে প্রতিবন্ধক। নতুন নীতিমালা চালু হলে প্রতিযোগিতা বাড়বে, সেবার মান উন্নত হবে এবং গ্রাহকের খরচ কমবে। রাজনৈতিক দলের মতামতগুলো ইতিবাচক। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দেশীয় স্বার্থ রক্ষা করে চূড়ান্ত নীতিমালা গড়া হবে।”

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে