ঢাকা, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
Sharenews24

আস্থাহীনতার ঘূর্ণিপাকে অচল শেয়ারবাজার, বাজার সংশ্লিষ্টদের সতর্কতা

২০২৫ মে ১৯ ১৫:০৪:১৮
আস্থাহীনতার ঘূর্ণিপাকে অচল শেয়ারবাজার, বাজার সংশ্লিষ্টদের সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘ সময় ধরে চলমান পতন ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা এখন আরও গভীর সংকটে রূপ নিচ্ছে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর একের পর এক বৈঠক, আশ্বাস ও নির্দেশনার পরও বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। সামান্য ইতিবাচক প্রবণতা দেখা দিলেও তা টেকসই হচ্ছে না। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন আর আশ্বাসে আস্থা ফিরছে না; প্রয়োজন বাস্তব ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ।

বৈঠকের আগে হঠাৎ চাঙ্গাভাব

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বৈঠকের আগের দিন ৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই কিছুটা চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যায়। বিনিয়োগকারীরা মনে করেছিলেন, উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে বাজার চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

পাঁচ নির্দেশনা, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি

১১ মে (রোববার) অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা শেয়ারবাজার উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা দেন। কিন্তু সেগুলো ছিল মূলত দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারভিত্তিক। ফলে আশানুরূপ প্রভাব পড়ে না বাজারে। এর পরদিনই বাজার ফের পুরনো পতনের ধারায় ফিরে যায়।

একের পর এক বৈঠক, কার্যকর কিছু নয়

বাজার পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী দ্রুত উদ্যোগ নেন। তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) এবং সিডিবিএল-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কিছু করণীয় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এগুলোর বেশিরভাগই মধ্যমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ হওয়ায় বাজারে তাৎক্ষণিক কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

ব্রোকারদের তাৎক্ষণিক প্রণোদনার দাবি

এরপর সোমবার ডিএসই কার্যালয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আনিসুজ্জামান চৌধুরী ফের আশ্বাস দেন, শেয়ারবাজার উন্নয়নে সব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে বৈঠকে উপস্থিত ব্রোকারেজ হাউজের প্রতিনিধিরা স্পষ্ট করে বলেন, কেবল আশ্বাসে আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়। তারা সরকারের কাছে বার্ষিক বিও হিসাবের ফি মওকুফ, মূলধন লাভ কর অব্যাহতি, ব্রোকার কমিশন কমানো, ডিভিডেন্ড কর অব্যাহতি, অগ্রিম আয়কর হ্রাসসহ তাৎক্ষণিক প্রণোদনা বাস্তবায়নের দাবি জানান। তাদের মতে, চোখে পড়ার মতো দৃশ্যমান পদক্ষেপই কেবল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।

হঠাৎ আশার আলো, ফের হতাশা

আজ সোমবার (১৯ মে) লেনদেন শুরুর পর বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শুরুর দিকে কিছুটা স্থিরতা থাকলেও প্রথমভাগে সূচক ফের পতনের দিকে যেতে থাকে। এমন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে যে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া পাঁচ নির্দেশনার অগ্রগতি পর্যালোচনায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে বসছেন। এই খবর বাজারে স্বস্তি তৈরি করে, সূচক ঘুরে দাঁড়ায়, এমনকি একপর্যায়ে চাঙ্গাভাবও লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু বড় বিনিয়োগকারীর ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কাছ থেকে বাজারে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না আসায় ইতিবাচক ধারা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। ফলে দুপুরের পর সূচক ফের নেতিবাচক দিকে মোড় নেয়, যা লেনদেন শেষে উভয় বাজারেই স্পষ্ট হয়।

‘এবার না জাগলে সর্বনাশ অনিবার্য’

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিংবা বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা যথেষ্ট নয়; সরকারের সরাসরি সাপোর্ট ছাড়া বাজার ঘুরে দাঁড়াবে না। বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউজ ও সরকার—সব পক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি।

তারা সতর্ক করে বলেন, যদি এখনই বাজারে বাস্তব ও স্পষ্ট নীতি সহায়তা না আসে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে শেয়ারবাজার ব্যবস্থা আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বিনিয়োগকারীরা সম্পূর্ণভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলে অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটি অচল হয়ে পড়বে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে