ঢাকা, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
Sharenews24

বিমানের চাকা খুলে পড়ার তদন্তে বের হলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

২০২৫ মে ১৮ ১০:২৭:০৯
বিমানের চাকা খুলে পড়ার তদন্তে বের হলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত শুক্রবার (১৬ মে) কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ারের একটি চাকা খুলে পড়ে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ না হলেও, ইতোমধ্যে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। বিমান প্রকৌশল বিভাগে গাফিলতির অভিযোগ করছেন এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ফ্লাইটের আগে উড়োজাহাজে রুটিন ইন্সপেকশন করা হয়। এছাড়া, বিভিন্ন যন্ত্রাংশের নির্ধারিত সময় অন্তর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। কিন্তু উড়োজাহাজটির ল্যান্ডিং গিয়ার প্রায় দেড় বছর ধরে ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে গিয়ারে ব্যবহৃত গ্রিজ শুকিয়ে গিয়ে যান্ত্রিক সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা উড্ডয়নের সময় চাকাটি খুলে পড়ার কারণ হতে পারে।

উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি ৬ মাস অন্তর ল্যান্ডিং গিয়ারের রক্ষণাবেক্ষণ বাধ্যতামূলক হলেও, তা অনুসরণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। অথচ ফ্লাইটটির মেইনটেনেন্স লগবুকে উড্ডয়নের আগে "সকল হুইল কন্ডিশন এবং সিকিউরিটি সেটিসফ্যাকটরি" উল্লেখ করা হয়েছিল।

ঘটনার সময় ফ্লাইটটি কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। উড্ডয়নের সময় অন্য একটি উড়োজাহাজের পাইলট লক্ষ্য করেন, আকাশে কোনো একটি বস্তু নিচে পড়ছে। পরে বিষয়টি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (ATC) রুমকে জানানো হয়। সেখান থেকে পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহকে অবহিত করা হয়।

পরে ডান পাশের ল্যান্ডিং গিয়ারে প্রেশার দিয়ে এবং জরুরি সহায়তা নিয়ে কৌশলে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করানো হয়। যেহেতু ঘটনাটি দিনে ঘটেছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ধরা পড়েছে, তাই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। রাতের বেলা হলে বা কেউ না দেখলে এটি ভয়াবহ পরিণতির দিকে যেতে পারতো।

বিমান বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইটটি এর আগেও সিলেট রুটে চলাচল করেছে এবং সর্বমোট ৯৭৬৮ বার ল্যান্ডিং করেছে। এ ঘটনায় বিমানের ফ্লাইট সেফটি ম্যানুয়াল, ধারা ৭.৮ অনুযায়ী চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন ক্যাপ্টেন এনামুল হক তালুকদার। সদস্য হিসেবে রয়েছেন ক্যাপ্টেন আনিসুর রহমান (ফ্লিট প্রধান), প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক (সদস্য সচিব), এবং পাইলট অ্যাসোসিয়েশন থেকে একজন প্রতিনিধি। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা রওশন কবীর জানান, প্রতিটি উড়োজাহাজ নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিরীক্ষা করা হয় এবং যেসব ইঞ্জিনিয়ারদের বেবিচক (বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত তারাই এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আরও বলেন, "উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে। তদন্তে প্রকৃত কারণ বের হবে, এবং কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

প্রসঙ্গত, ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহর দক্ষতায় প্রথম চেষ্টাতেই শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায় যাত্রী ও ক্রুবোঝ।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে