ঢাকা, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক সেল ও পতনের তদন্ত চায় বিনিয়োগকারীরা

২০২৫ এপ্রিল ২৬ ১২:১৬:০৬
শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক সেল ও পতনের তদন্ত চায় বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন এবং 'অস্বাভাবিক সেল প্রেসার' বা অতিরিক্ত বিক্রির চাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা মনে করেন, বাজারের এই অস্থিরতার পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজি রয়েছে, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিপদে ফেলছে। বেশকিছু বিনিয়োগকারী দাবি করেছেন, যদি না এমন কোনো সংগঠিত চাপ থাকত তবে কেন অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে নেতিবাচক খবর থাকলেও তারা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অথচ শেয়ারবাজারে তেমন কোন নেতিবাচক চাপ নেই, তারপরও প্রতিদিনই শেয়ারবাজার নাজুক অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যৌথ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা ডিএসই এবং সিএসই ট্রেডিং ডেটা বিশ্লেষণ করে অস্বাভাবিক লেনদেনকারী একাউন্টগুলো চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন।

আবদুর রহিম নামের এক প্রবীণ বিনিয়োগকারী উদাহরণ হিসাবে বিদায়ী সপ্তাহে বীচ হ্যাচারির লেনদেনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গত মাসে শেয়ারটির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি খতিয়ে দেখতে বিএসইসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু তখনও কোম্পানিটির শেয়ার দামে তেমন পতন দেখা যায়। গত ১৭ এপ্রিল কোম্পানিটি দেশে প্রথম কোরাল মাছের চাষ শুরু করছে বলে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিয়েছে। এই সুখবরের পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দামে বড় নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়।

গেল সপ্তাহে ব্যাচ হ্যাচারি ডিএসইর দাম পতনের শীর্ষ তালিকায় শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে এবং লেনদেনের শীর্ষ তালিকায়ও প্রথম স্থানে অবস্থান নিয়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। আর সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫.৩৭ শতাংশ। আর সপ্তাহজেুড়েই দেখা গেছে, লেনদেনের শুরুতেই ১০ শতাংশ সর্বনিম্ন দামে কোম্পানিটির ৫০ লাখ শেয়ারের ওপরে সেল প্রেসার।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৩০ হাজার এবং দাম কমেছে ৮.৭৯ শতাংশ। সোমবার লেনদেন হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ ৪০ হাজার, দাম কমেছে ৯.৯৮ শতাংশ এবং শেষবেলায় ক্রেতাশুন্য ছিল। মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতেই সর্বনিম্ন দামে ৫০ লাখের বেশি শেয়ারের সেল প্রেসার দেখা যায়। আতঙ্কের কারণে এদিন শেয়ারটি লেনদেন নেমে যায় তলানিতে, লেনদেন হয় মাত্র ৪ লাখ ৭৭ হাজার শেয়ার এবং দিনভর ছিল ক্রেতাশুন্য। বুধবারও শুরুতে ক্রেতাশুন্য দামে ৫৫ লাখের বেশি সেল প্রেসার। ওইদিন লেনদেন হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার শেয়ার এবং দাম কমেছে ৯.৯৩ শতাংশ, দিনভর ছিল ক্রেতাশুন্য। বৃহস্পতিবারও ক্রেতাশুন্য দামে অর্থাৎ ৫৮ টাকায় শেয়ারটির লাখ লাখ ক্রেতা হাজির হয়। এদিন সর্বনিম্ন দামে কিছুক্ষণ লেনদেন হওয়ার পর শেয়ারটি ঘুরে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে আগের দিনের ক্লোজিং দাম ৬৬ টাকা ৬০ পয়সা অতিক্রম করে যায় শেয়ারটির দাম। তারপর দেখা যায় ফের অস্বাভাবিক সেল প্রেসার। শেষ বেলায় শেয়ারটির দাম আবারও ৫৮ টাকার কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়। এদিন শেয়ারটির লেনদেন হয় ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার, যা শেয়ারটির লেনদেন কেবল দুই বছরের মধ্যে নয়, স্বরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। এদিন ডিএসইর মোট লেনদেন হয়েছে ৩৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা, আর বীচ হ্যাচারির লেনদেন হয়েছে ৪৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১২.৫১ শতাংশ। একক কোম্পানির লেনদেন হিসাবে এটি ছিল ডিএসইর রেকর্ড।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদায়ী সপ্তাহে বীচ হ্যাচারির লেনদেন ও পতন কোনভাবেই স্বাভাবিক বলে গ্রহণ করা যায় না। অস্বাভাবিক এই লেনদেন ও পতন ঘটানোর সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ গোষ্টির সম্পৃক্ততা অবশ্যই রয়েছে। বিএসইসি ও ডিএসইর উচিত শেয়ারবাজারের স্বার্থে সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যথায় শেয়ারবাজারের এমন অনিয়ম ও জালিয়াতি চলতেই থাকবে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারী যারাই শেয়ারবাজারে আসবে, তাদের পুঁজি হারানোর গল্প চলতেই থাকবে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে