ঢাকা, শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

২০ বছর পর বন্যার পানিতে তলিয়েছে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক

২০২৪ মে ৩০ ১৭:১৪:৩৯
২০ বছর পর বন্যার পানিতে তলিয়েছে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক : এশিয়ান হাইওয়ে নামে পরিচিত সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি বেশ উঁচু। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সাথে সংযোগকারী এই মহাসড়কটি একবার ১৯৮৮ সালের বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল। এই রাস্তাটা তখন অনেক নিচু ছিল।

তবে এর পরবর্তীতে এই মহাসড়ক সংস্কার করা হয় এবং বেশ উঁচু করা হয়। উঁচু করার পর ২০০৪ সালের বন্যায়ও একবার এই মহাসড়কের একাংশ ডুবেছিল। এরপর আর কোনো বন্যায় এই সড়ক ডুবেনি।

সর্বশেষ ২০২২ সালের বন্যায়ও ডুবেনি এই মহাসড়ক। তবে এবার মহাসড়কটির জৈন্তাপুরের অংশ ডুবেছে।

২০ বছর পর বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ভোররাতে জৈন্তাপুর উপজেলার সিলেট তামাবিল মহাসড়কের ৪ নম্বর, রাংপানি, বিরাইমারা এলাকার সড়কটি ডুবে যায়।

এদিন সকাল ১১টা পর্যন্ত মহাসড়কের এই অংশ ডুবন্ত ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি সড়ক থেকে কিছুটা নেমে যায়। তবে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি বাড়লে আবারও মহাসড়কের এই অংশটি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটের সবচেয়ে উঁচু সড়ক বলা হয় সিলেট তামাবিল মহাসড়ককে। আজ ভোররাতে এই সড়কে হাঁটু সমান পানি ছিল।

এই সড়ক ছাড়াও এই উপজেলার প্রায় সবকটি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এই এলাকার কৃষকরা। কারণ বেশিরভাগ কৃষকের ঘরেই ছিল বৈশাখে তোলা নতুন ধান। নিজেদের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই এই ধান বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই এই বন্যায় আক্রান্ত মানুষজনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে।

জৈন্তাপুর উপজেলার ফেরিঘাট এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, দুইদিন ধরেই ঢলের পানি নামছে। তবে গতকাল ঢলের পানি বেশি নামে। রাত যত বাড়ে পানিও তত বাড়ে। আমার নিজের ঘরে কোমর সমান পানি ছিল।

তিনি বলেন, পানি স্রোত দেখে আমার ভাতিজা ভয় পেয়ে যায় এবং ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে উদ্ধার হওয়ার জন্য সাহায্য চায়। তখনে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই এসে তাদেরসহ আশপাশের কয়েকটি ঘরের মানুষদের উদ্ধার করে।

তামাবিল মহাসড়কপাশের সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবদুল হাই আল হাদী বলেন, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই মহাসড়ক দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের অনেক যাত্রী যাতায়াত করেন। দুই দেশ থেকে লাখ লাখ টাকার পণ্য প্রতিদিন এই সড়কে পরিবহন করা হয়।

তিনি বলেন, এই মহাসড়কে ৯১টি ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। এরমধ‍্যে ২১টি ছাড়া বাকি সবগুলোর পাশে বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে। ব্রিজ-কালভার্টের অবরুদ্ধ অবস্থার জন‍্য মহাসড়কটি ডুবছে।

তিনি আরো বলেন, ব্রিটিশরা এই মহাসড়কটি তৈরি করে তখনকার আসাম প্রদেশের সিলেট ও শিলং-এর মধ্যে যোগাযোগের জন্য। ১৯৩২ সালে এই রাস্তায় আনুষ্ঠানিক যান চলাচল শুরু হয়। সড়কটি নিচু হওয়ায় ১৯৮৮ সালের বন্যায় এবার এই মহাসড়কটি তলিয়ে যায়। এরপর সংস্কার করা হয়।

আবদুল হাই আল হাদী বলেন, ২০০৪ সালের বন‍্যার পর মহাসড়কটি সংস্কার করে আরও উঁচু করা হয়। প্রায় ৪২ কিলোমিটার সুউচ্চ মহাসড়কে পানি ওঠায় মানুষজন বেশি আতঙ্কিত হয়েছে।

বন্যায় আক্রান্ত হারুবিল এলাকার সুলতানা বলেন, গতকাল জোহরের সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের পেটে কোনো খাবার পড়েনি। সারারাত কোমর পানি পর্যন্ত গরু-ছাগল নিয়ে ঘরের মধ্যে ছিলাম। ঘরের এক অংশের বেড়া নেই। হাড়ি, পাতিল, তোষক, জাজিম সব শেষ হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, এবারের বন্যা মনে হয় ভয়াবহ হবে। উজানে অনেক মেঘ আছে। সেখানে বৃষ্টিও চলমান আছে। তাই পাহাড়ি ঢল কমার সম্ভাবনা অনেক কম। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বৃহস্পতিবার দুপুরে জৈন্তাপুর ও গোয়াইঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়াইনঘাট, জৈন্তারপুর, কানাইঘাট উপজেলায় বেশি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। লোকালয়গুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। জকিগঞ্জ এবং কোম্পনীগঞ্জ উপজেলায়ও পানি উঠেছে তবে ওই দুই এলাকায় এখানকারমতো ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়নি। এই তিন উপজেলাতে গতকাল রাত থেকে যারা পানিবন্দি তাদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত জৈন্তাপুর উপজেলায় ৪৮টি, গোয়াইনঘাটে ৫৬টি ও অন্যান্য উপজেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন তাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নতুন করে কেউ পানিবন্দি হলে উদ্ধারের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি আবহাওয়া ভালো হয়ে গেলে, বৃষ্টিপাত কমে গেলে, পানি আস্তে আস্তে কমে যাবে। সার্বিক প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

শেয়ারনিউজ, ৩০ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে