ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি থেকে রেমিট্যান্স পতন, আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে উত্থান

২০২৪ এপ্রিল ২৮ ১৯:৫০:৩৬
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি থেকে রেমিট্যান্স পতন, আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে উত্থান

প্রবাস ডেস্ক : দেশের প্রধান শ্রমবাজার যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে রেমিট্যান্স আশাব্যাঞ্জক হারে বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৩২৭ কোটি ৭ লাখ ডলার। একই সময়ে প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকে কেবল ১৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার এসেছে।

অর্থাৎ সৌদি আরবের সঙ্গে আমিরাত থেকে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহের ব্যবধান ৬০ শতাংশেরও বেশি। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শীর্ষ রেমিট্যান্সের বাজার হিসেবে ইউএই তার নাম ধরে রেখেছে।

সৌদি আরবের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় বিপর্যয় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশটি থেকে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ১৯৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।

অথচ গত অর্থবছরেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেকর্ড ৩৫২ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। আগের তিন বছরও প্রবৃদ্ধির ধারায় ছিল দেশটি থেকে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহ। সেই প্রবাহে বিপর্যয়ের কারণে শীর্ষস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম নেমে গেছে চতুর্থে।

এদিকে, সৌদি আরব নেমেছে তৃতীয় স্থানে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল থাকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের নাম। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, সিঙ্গাপুরসহ বড় শ্রমবাজারগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহ এখন বেশ শ্লথ।

প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকে আসা প্রবাসী আয়ের বড় বিপর্যয় যেমন শঙ্কা তৈরি করেছে, তেমনি আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্সের বড় উল্লম্ফন বেশ আশার জন্ম দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি আরবের রেমিট্যান্সের বাজার ক্রমেই হুন্ডির নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। বৈধ পথে দেশটি থেকে অর্থ পাঠানোও কঠিন হয়ে উঠছে। বিপরীতে আইনকানুন সহজ ও উদার করে দেয়ায় ইউএই এখন বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম শীর্ষ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

বাংলাদেশী বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও দুবাইসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে অফিস খুলেছেন। অনেকে দেশ থেকে সম্পদ পাচার করে আমিরাতে বিনিয়োগ করছেন। অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের পাশাপাশি পাচারকৃত অর্থের একটি অংশ এখন রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে ঢুকছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশের তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল ইউএই। ওই বছর আমিরাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৪৩ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে ২০৭ কোটি ১৮ লাখ ডলারে নেমে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৭ কোটি ৭ লাখ ডলার।

অভিবাসী হিসেবে প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমিরাতে গেছেন। তবে তার তুলনায় বহুগুণ বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক অভিবাসী হয়েছেন সৌদি আরবে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত গত দুই দশকে কাজের উদ্দেশ্যে ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৫ বাংলাদেশী শ্রমিক সৌদি অভিবাসী হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ গেছেন গত তিন বছরে।

অথচ দেশটি থেকে এই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বেড়ে উল্টো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৭২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। এর পর থেকেই প্রবাহ কমছে ধারাবাহিকভাবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এলেও গত অর্থবছরে তা ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে নেমে আসে। আর চলতি অর্থছরে পরিস্থিতি আরো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সৌদি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

শেয়ারনিউজ, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে