ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ঘুষ দিয়ে আইপিও বাগিয়ে নেওয়া এশিয়াটিকের কৃত্রিম মুনাফা

২০২৪ জানুয়ারি ০২ ১৮:০৫:২২
ঘুষ দিয়ে আইপিও বাগিয়ে নেওয়া এশিয়াটিকের কৃত্রিম মুনাফা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে যাচ্ছে ব্যবসায় হিমশিম খাওয়া এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। প্রিমিয়ামে শেয়ারবাজারে আসতে যাওয়া এই কোম্পানিটির ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। ফলে আয় সংকটে থাকা কোম্পানিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছে না। এমন একটি দূর্বল কোম্পানি বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করতে আসছে। এক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের এই সুযোগ পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক লেনদেনে সরাসরি কাজ করেছে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদ। যিনি যেভাবেই হোক কোম্পানিটিকে আইপিওতে টিকিয়ে রাখতে রাজি ছিলেন। যা কিছু প্রয়োজন, তাই করতে রাজি ছিলেন তিনি। এলক্ষ্যে তিনি বিএসইসির কমিশনার ও আইপিও বিভাগের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখাও করেন। তবে সৎ এই কমিশনারকে তিনি অবৈধ কাজে রাজি করাতে পারেননি। একইসময় অন্যদের সঙ্গেও মনির আহমেদ যোগাযোগ করেছিলেন। অবশ্য সেখানে সফলতাও পেয়েছেন তিনি।

এশিয়া ল্যাবরেটরিজের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকমনির আহমেদ

সব স্থায়ী সম্পদে কম অবচয় চার্জ করে নিয়মিত মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই স্থায়ী সম্পদের যে পরিমাণ আয়ুস্কাল বিবেচনা করছে, সে হারে অবচয় চার্জ করছে না। তারা অর্ধেক হারে অবচয় চার্জ করছে।

রেড হেরিং প্রসপেক্টাসের ২৩৫ পৃষ্টা অনুযায়ি, এশিয়াটিক ল্যাব কর্তৃপক্ষ প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজের আয়ুস্কাল ১৩ বছর ধরেছে। এ হিসাবে সরলরৈখিক পদ্ধতিতে বছরে প্রায় ৭.৫% করে অবচয় চার্জ করলে ১৩ বছর শেষে ওই সম্পদ ও অবচয় সমান সমান হয়ে যাবে। কিন্তু তারা ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে ৭.৫% হারে অবচয় চার্জ করছে। এতে করে ২৬ বছর আয়ুস্কাল বিবেচনায় চার্জ গণনা করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি স্থায়ী সম্পদে কম অবচয় চার্জ করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হচ্ছে।

এশিয়াটিক যে কম হারে অবচয় চার্জ করে, তা আরও বেশি প্রমাণিত যখন সমজাতীয় কোম্পানিগুলোর অবচয় হার বেশি। সমজাতীয় ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওরিয়ন ফার্মা, ইবনে সিনা ও একমি ল্যাবের তুলনায় প্রায় সব সম্পদেই কম হারে অবচয় চার্জ করে এশিয়াটিক ল্যাব।

দেখা গেছে, প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজ ৩টি কোম্পানির থেকেই এশিয়াটিকের অবচয় হার কম। এছাড়া যানবাহনেও সবক্ষেত্রে কম অবচয় চার্জ করে। এরমধ্যে একমি ল্যাব সর্বনিম্ন ৮.৩৩% হারে অবচয় চার্জ করে বিবেচনায় নিলেও সেটা এশিয়াটিকের থেকে বেশি। কারন একই হারে অবচয় চার্জ করলেও ক্রমহ্রাসমানের তুলনায় সরলরৈখিকের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ অবচয় হয়। যেমন ১টি সম্পদ যদি ১০ শতাংশ হারে ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে অবচয় চার্জ করলে ২০ বছর আয়ুস্কাল থাকবে বা ২০ বছর ধরে অবচয় চার্জ করা যাবে। কিন্তু সরলরৈখিক পদ্ধতিতে ১০ বছরেই শেষ হয়ে যাবে।

এছাড়া আসবাবপত্রে একমি ল্যাবের থেকে কম, ভবনে ওরিয়ন ফার্মা ও একমি ল্যাবের থেকে কম এবং অফিস ইক্যুপমেন্টের ক্ষেত্রে ওরিয়ন ফার্মা ও একমি ল্যাবের থেকে কম অবচয় চার্জ করে এশিয়াটিক।

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই টাকা সংগ্রহ করতে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন উপায়ে মুনাফায় বড় উত্থান দেখা যায়। ব্যয় কমিয়ে বা আয় বাড়িয়ে এমনটি করার অভিযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারীসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আকৃষ্ট করতে কৃত্রিমভাবে এমনটি করে দেখানো হয়। যাতে তালিকাভুক্তির পরে সেসব কোম্পানির ধারাবাহিক পতন হয়। এছাড়া ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। যে কারনে শেয়ারবাজারে বর্তমানে অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে আর্থিকহিসাবেঅনাস্থা।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ সংক্রান্ত আরও খবর

ঘুষ দিয়ে আইপিও বাগিয়ে নেওয়া এশিয়াটিকের ভূয়া জমি উন্নয়ন সম্পদ

এশিয়াটিকের অবাস্তব ভবন নির্মাণ ব্যয়ের মাধ্যমে ৪৫ কোটি টাকার ভূয়া সম্পদ

এশিয়াটিকের জরিমানা আইওয়াশ

অবৈধ পথে টিকে গেল অনিয়মে ভরা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের আইপিও

শেয়ারনিউজ, ০২ জানুয়ারি ২০২৪

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে