ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

এশিয়াটিকের অবাস্তব ভবন নির্মাণ ব্যয়ের মাধ্যমে ৪৫ কোটি টাকার ভূয়া সম্পদ

২০২৩ ডিসেম্বর ১৭ ০৭:৪৬:০৭
এশিয়াটিকের অবাস্তব ভবন নির্মাণ ব্যয়ের মাধ্যমে ৪৫ কোটি টাকার ভূয়া সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও ইস্যু ম্যানেজার শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টকে প্রায় ৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যা ছিল কমিশন ও কোম্পানির যৌথ পরিকল্পনায় আইওয়াশ মাত্র।

এই জরিমানা করে কমিশন নিজেদেরকে নিরপেক্ষ এবং কোম্পানিটিকে পাপমুক্তির সাজা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এরপর বিশেষ ব্যবস্থায় কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় তারা। যে কোম্পানিটি অবাস্তব ভবন নির্মাণ ব্যয়ের মাধ্যমে ৪৫ কোটি টাকার ভূয়া সম্পদ দেখিয়েছে।

প্রমাণিত অনিয়মের মধ্য দিয়ে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে এক ভিন্ন রূপ দেখায় কমিশন। এই ভিন্ন রূপে রূপান্তর করতে অবশ্য এশিয়াটিককে অনেক গচ্ছা দিতে হয়েছে বলে শোনা যায়। যা করার জন্য মাঠ প্রস্তুত করেছিলেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদ।

মনির আহমেদ যেভাবেই হোক কোম্পানিটিকে আইপিওতে টিকিয়ে রাখতে রাজি ছিলেন। যা কিছু প্রয়োজন, তাই করতে রাজি ছিলেন তিনি। এলক্ষ্যে তিনি বিএসইসির কমিশনার ও আইপিও বিভাগের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখাও করেন। তবে সৎ এই কমিশনারকে তিনি অবৈধ কাজে রাজি করাতে পারেননি। একইসময় অন্যদের সঙ্গেও মনির আহমেদ যোগাযোগ করেছিলেন। অবশ্য সেখানে সফলতাও পেয়েছেন তিনি।

এই এশিয়াটিক অস্বাভাবিক ভবন নির্মাণ ব্যয়, অবচয় কম চার্জ, অকল্পনীয় জমি উন্নয়ন ব্যয়সহ বিভিন্নভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বেশি দেখিয়ে শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৯৫ কোটি টাকা উত্তোলনের অপেক্ষায়। যে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দেশের প্রতিষ্ঠিত ও সমজাতীয় ইবনে সিনা ও একমি ল্যাবরেটরিজের মতো কোম্পানির থেকে কয়েকগুণ বেশি প্রফিট মার্জিন দেখিয়েছে। যেখানে এশিয়াটিক ল্যাব ওইসব কোম্পানির তুলনায় বাজার দখলে ধারে-কাছেও নেই।

প্রসপেক্টাসের ৫৭ পৃষ্টা অনুযায়ি, এশিয়াটিক ল্যাবের প্রাচীরসহ ২,২৪,২৬১ স্কয়ার ফিট ভবন ও কাঠামো রয়েছে। যা নির্মাণে (জমি ছাড়া) ১১২ কোটি ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৪ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে ২৬৬ পৃষ্টায় উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি স্কয়ার ফিট কাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৯৯৫ টাকা। যা কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয় বলে এখাতের সংশ্লিষ্টদের দাবি।

বিএসইসির জিজ্ঞাসায়ও বলা হয়েছে, পূণ:মূল্যায়ন ছাড়া এশিয়াটিক কর্তৃপক্ষ ২২৪২৬১ স্কয়ার ফিট ভবন ও প্রাচীরের নির্মাণ ব্যয় দেখিয়েছে ১১২,০১,৯৭,৬৬৪ টাকা। যা প্রতি স্কয়ার ফিটে প্রায় ৫০০০ টাকা পড়েছে। যা দেশের নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় খুবই বেশি।

এই বিষয়ে এক প্রকৌশলী বলেন, ভবন নির্মাণে ৫ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যত ভালো মানেরই করা হোক না কেনো, সেটা ৩০০০ টাকা অতিক্রম করতে পারে না। তবে আসল কথা হলো প্রায় সব কোম্পানিই শেয়ারবাজারে আসার আগে প্রতারণার জন্য বেশি করে দেখিয়ে থাকে।

ওই প্রকৌশলীর বক্তব্য অনুযায়ি, কমপক্ষে ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ভবন হিসাবেই সম্পদ বেশি দেখিয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। কোম্পানিটি যদি প্রতি স্কয়ার ফিটে ২০০০ টাকা করে বেশি দেখিয়ে থাকে, তাহলে (২০০০*২২৪২৬১) ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছে।

একই বিষয়ে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের সিইও বলেন, ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় প্রতি স্কয়ার ফিটে ৫ হাজার টাকা ব্যয়ের ঘটনা চোখে পড়েনি। এটি হতে পারে বিশেষ একটি অংশের জন্য। যেমন কোন বিশেষ মেশিন বসানোর জন্য ৫-৭ ফুট ঢালাই করার জন্য লাগতে পারে। ওই অংশটুকুর জন্য হতে পারে। কিন্তু পুরো অবকাঠামো নির্মানে গড়ে ৫ হাজার টাকা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

এরমধ্যেই শুধু নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখেনি এশিয়াটিক ল্যাব কর্তৃপক্ষ। তারা সবাইকে আকৃষ্ট করার জন্য রোড শো করার আগে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি সম্পদ পূণ:মূল্যায়ন করে বাড়িয়ে নিয়েছে। যেখানে ৫ হাজার টাকার অতিরঞ্জিত নির্মাণ ব্যয়ের ভবন ও কাঠামো বেড়ে প্রায় ৫৩০০ টাকায় নেওয়া হয়েছে।

আরও পর্ব আসছে....

শেয়ারনিউজ, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে