গলার কাঁটা মার্জিন ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শাহরিয়ার কবির (ছ্দ্ম নাম)। সঞ্চয়ের ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন শেয়ারবাজারে। নিজ পুঁজিতে দুই বছরে লাভসহ তার বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১ কোটি টাকা। ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু মার্জিন ঋণের ফাঁদে পড়েন রঞ্জন। কয়েক ধাপে ৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এখন পড়েছেন বিপদে। ইতোমধ্যে ঋণের সুদও পরিশোধ করেছেন ৫ কোটি। চক্রবৃদ্ধি সুদে এখনো ঋণ ৫ কোটিই রয়ে গেছে। লাভতো দুরের কথা পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা এ বিনিয়োগকারী। কিন্তু এখনো ৫ কোটি টাকা দেনা কিভাবে পরিশোধ করবেন এ নিয়ে ঘুম নেই শাহরিয়ার কবিরের।
তিনি বলেন, ঋণ সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল না। হঠাৎ করে ব্রোকার থেকে আমাকে বলা হলো, মার্কেট ভালো আছে, লোন নিয়ে ব্যালেন্স করে ফেললে ভালো হবে। আমি জানি না যে মার্কেট এমন হবে। লোন নিয়ে শেয়ার কিনে এখন আমি ধরা। ধরুন আমি ৫০ টাকা লোন নিয়েছি। যদি তার সুদ ৫ টাকা হয়, সেটা আগেই কেটে নিয়ে ঋণের সঙ্গে যোগ হচ্ছে, অর্থাৎ ৫৫ টাকার ওপর সুদ কাটছে। এভাবে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ বাড়ছে। এ যেন এক রকম গ্রাম্য দাদন ব্যবসার মতোই সুদের ব্যবসা।
আরেক বিনিয়োগকারী শহীদুল ইসলাম। তিনিও মার্জিন ঋণে বিপাকে। লোভে পড়ে আসল ও মুনাফার টাকার সঙ্গে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু বাজার ধসে ২৮ লাখ টাকার বিনিয়োগ নেমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখে। অর্থাৎ ২৫ লাখ টাকা হাওয়া। রঞ্জন ও শহীদুলের মতো লাখ লাখ বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণ নিয়ে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই সঞ্চয়ের সমপরিমাণ মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। এরপর যখন দরপতন শুরু হয়, ব্রোকাররা নিজেদের টাকা তুলে নিতে মার্জিন অ্যাকাউন্টের শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি (ফোর্সসেল) করে দেন। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়, ধস নামে বাজারে। আর তাই মন্দা শেয়ারবাজারে গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে মার্জিন ঋণ।
সামগ্রিকভাবে বাজারের জন্যও বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ বাড়ায় বিপাকে বিনিয়োগকারীরা। যদিও ফোর্সসেল বন্ধ করতে বিএসইসি এক অনুপাত এক (১ : ১) মার্জিন ঋণের বিধান চালু করেছে। আপাতত দৃষ্টিতে ফোর্সসেলের ক্ষতি থেকে বাঁচতে কমিশন এটি করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বর্তমানে বাজারে মার্জিন ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। বিভিন্ন সময়ে বাজার অতিমূল্যায়িত হওয়ার ক্ষেত্রেও এই ঋণ দায়ী। কারণ, মৌলভিত্তির বাইরে দুর্বল কোম্পানিতেও ঋণ নিয়ে কারসাজি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১০ সালের ধসের পর মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, কেবল মার্জিন ঋণের কারণে। এর কারণে বাজারে ফোর্সসেল হয়, লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখনও ছোট ছোট যত ধস হচ্ছে তা ফোর্সসেলের কারণে। তাদের মতে, যত দূর সম্ভব ঋণ না করেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত।
শেয়ারবাজারে ঝুঁকি থাকবেই। ঋণ না করে সঞ্চিত অর্থ থেকে বিনিয়োগ করা ভালো। যারা মার্জিন লোন নেন, তারা লোভে পড়ে নেন। দরপতনে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। যা বাংলাদেশের মতো দুর্বল বাজারের জন্য এটি মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ। একই সঙ্গে চক্রবৃদ্ধি সুদে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। তাই মার্জিন ঋণে বিনিয়োগকারীদের চক্রবৃদ্ধি সুদ বাতিল করা উচিত কলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, আমরা সবসময়ই মার্জিন ঋণকে নিরুৎসাহিত করি। যার ক্ষমতা নেই তার কেন অতিরিক্ত সুদে বিনিয়োগে আসতে হবে। ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা ঠিক নয়। আর ঋণ নিলে সুদ দিতে হবে এটাই নিয়ম। যদিও না নেয়াই উত্তম। তবে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ/অস্বাভাবিক হারে কেউ সুদ নিলে তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে। এটা অন্যায়।
সূত্র মতে, গ্রাহককে শেয়ার কিনতে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজ থেকে যে ঋণ দেয়া হয়, একে মার্জিন ঋণ বলে। ব্রোকারেজ হাউজ দাম কমে গেলে গ্রাহকের শেয়ার তারা ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক বিক্রি) করে। বর্তমানে মার্জিন ঋণের এই হার ১ ঃ ০ দশমিক ৮। এর অর্থ হলো কোনো গ্রাহকের ১০০ টাকা থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ থেকে আরও ৮০ টাকা ঋণ নেয়া যাবে। যদিও বর্তমানে এই মাত্রা কিছুটা কম।
যদিও ২০১০ সালে গ্রাহকের বিনিয়োগের বিপরীতে দশগুণ পর্যন্ত ঋণ দিয়েছিল বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ। এর ফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা পুরো দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে ৩৩ লাখ বেনিফিশিয়ারি ওনার্সধারী (বিও) বিনিয়োগকারীর মধ্যে মার্জিন ঋণ নেয়াদের নেগেটিভ ইক্যুইটি ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্জিন ঋণের কারণে বাজারে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন হয়। ফলে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও শেয়ারবাজারের মর্যাদাক্ষুন্ন হয়। বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে মার্জিন ঋণ পরিহার করা উচিত। তাহলে প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়বে, কমবে কারসাজি। ২০১০ সালের পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদনেও শেয়অরবাজারে ধসের পেছনে মার্জিন ঋণকে দায়ী করা হয়। সেখানে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ পরিহারের সুপারিশও করা হয়।
শেয়ারবাজার ২০১০ সালের পরিস্থিতি থেকে উন্নতি করলেও এখনো ক্ষতিতে রয়েছেন মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা। রঞ্জন ও শহীদুলের মতো লাখ লাখ বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণ নিয়ে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই সঞ্চয়ের সমপরিমাণ মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। এরপর যখন দরপতন শুরু হয়, ব্রোকাররা নিজেদের টাকা তুলে নিতে মার্জিন অ্যাকাউন্টের শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি (ফোর্সসেল) করে দেন। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়, ধস নামে বাজারে।
প্রতিদিনিই কোন না কোন বড় শিল্পগ্রুপকে যারা অর্থ আত্মসাত বা খেলাপি হয়েছেন এমন প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ছাড় দিয়ে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। অথচ শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ২০১০ সালের ধস এবং মার্জিন ঋণ নিয়ে চক্রবৃদ্ধি সুদ টানতে টানতে নিস্ব হয়ে পড়েছেন। এসব ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা আজ পর্যন্ত কোন সুবিধা পাননি। বা তাদের জন্য নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ।
শেয়ারনিউজ, ০৬ অক্টোবর ২০২৩
পাঠকের মতামত:
- সাবেক হুইপ স্বপন ও পরিবারের ৬২ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ
- শাহজালাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাতুজ জুম্মা কারাগারে
- মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন গ্রেফতার
- বিদেশে ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ শনাক্ত
- মহাখালীতে পেট্রোল পাম্পে আগুন
- ঢাকা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ: জানা গেল নেপথ্য কারণ
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাল তালিকায় ২০ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- ১২ বছর পর দর্শকের আবেগে ধাক্কা দিলেন দেব-শুভশ্রী
- সাড়ে সাত মাসে বিনিয়োগকারীদের ৪৩ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি
- প্রশাসনিক পদে বড় রদবদল
- এইচএসি সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে বিএসইসির তদন্ত শুরু
- পাতাল রেল নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিল কর্তৃপক্ষ
- হাসনাত আব্দুল্লাহর কাছে পদত্যাগপত্র
- ফারুকীর শারীরিক অবস্থা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি
- কোনো রেমিট্যান্স আসেনি ৮ ব্যাংকে
- ডেল্টা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- কাল লেনদেনে ফিরবে ২ কোম্পানি
- পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি
- ইনুর সঙ্গে হাসিনার গোপন ফোনালাপ ফাঁস
- সেই রিকশাচালককে নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা
- রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো নিয়ে রিজওয়ানার ব্যাখ্যা
- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন তিনগুণ
- টানা পতনের পর শেয়ারবাজারে ইতিবাচক রূপান্তর শুরু
- ১৭ আগস্ট ব্লকে চার কোম্পানির বড় লেনদেন
- ১৭ আগস্ট লেনদেনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ১৭ আগস্ট দর পতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ১৭ আগস্ট দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
- খেলাপি থেকে রেহাই পাচ্ছেন এক হাজারের বেশি ঋণগ্রহীতা
- ২০২৬ সালে চালু হবে বেস্ট হোল্ডিংসের ম্যারিয়ট ভালুকা
- মার্কিন দূতাবাসের কড়া সতর্কবার্তা
- এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নতুন রেকর্ড
- সাংবাদিক ইলিয়াসের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিলো আইএসপিআর
- সেনাপ্রধানের শঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে?
- প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মানতে হবে যেসব শর্ত
- মাইন্ডসেট নিয়ে যা বললেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী
- দুই কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন
- নাহিদ ইসলামকে কাদের সিদ্দিকীর সরাসরি চ্যালেঞ্জ
- সূচকের উত্থানে চলছে লেনদেন
- বিয়ের আগেই ‘ডিভোর্স চুক্তি’ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর
- দুর্বল ব্যাংক ধুঁকছে, ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত
- স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সন্তানসহ দুধ দিয়ে গোসল যা জানা গেল
- ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত, শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা
- রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও অপসারণ প্রক্রিয়ায় যা বলা আছে
- ধেয়ে আসছে ভয়াবহ হ্যারিকেন, ঘন্টায় গতি ২৬০ কিমি
- যেসব ভুলে কড়া ডায়েটেও কমছে না ওজন
- সাবেক সেনাপ্রধানকে নিয়ে ইকবালের ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তা ফাঁস
- ১০ কোটি ডলার রিজার্ভ চুরির রহস্য ফাঁস!
- শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় আসছে বড় পরিবর্তন
- উপদেষ্টা ফারুকীর অসুস্থতার সর্বশেষ খবর
- তিন কোম্পানির ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা
- আপনার ট্যাক্স ফাইল কি অডিটে? দেখুন এনবিআরের নতুন তালিকা
- সেই চীনা নাগরিকের বিষয়ে সর্বশেষ যা জানা গেল
- এক্সিম ব্যাংকের অভিনব ঋণ আদায় সাড়া ফেলেছে ব্যাংকপাড়ায়
- ফ্লোর প্রাইসের উপরে লেনদেন হলো বেক্সিমকোর শেয়ার
- ৬ ব্যাংকের ফরেনসিক নিরীক্ষার প্রস্তাব বাতিল করল সরকার
- সামিট পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিনছে আরব আমিরাতের কোম্পানি
- এএফপি’র অনুসন্ধান: ৫ আগস্ট কোথায় ছিলেন পিটার হাস?
- ২০ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা
- শেয়ারবাজারে ব্লকচেইন— স্বচ্ছতা ফেরানোর নতুন দিগন্ত
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে পাঁচ কোম্পানির শেয়ার
- দুই শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণের যাত্রা শুরু
- বছরের সর্বনিম্ন দামে ৮ কোম্পানির শেয়ার
- পতনের স্রোতেও তিন শেয়ারের বড় টান
- ভূমি সেবায় চমকপ্রদ পরিবর্তন আসছে