ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

শঙ্কা বাড়ছে ডেঙ্গুর, টিকা নিয়ে যা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা

২০২৩ আগস্ট ২১ ১৬:২২:৪২
শঙ্কা বাড়ছে ডেঙ্গুর, টিকা নিয়ে যা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ডেঙ্গুতে বাড়ছে মৃত্যু, বাড়ছে শঙ্কা। সেই শঙ্কা রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার মহামারি ঘোষণা না করলেও সারা দেশে মহামারির রূপ ধারণ করেছে ডেঙ্গু। ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে এই বছর।

চলতি বছরের ৮ মাস শেষ না হলেও ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড হয়েছে। সাধারণত বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এবার বছর জুড়েই মিলছে ডেঙ্গু রোগী।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারসহ সবার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ। এমন অবস্থায় আলোচনায় আসছে ডেঙ্গুর টিকা প্রসঙ্গ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রায়ালে থাকলেও সব বয়সীদের জন্য কার্যকর কোনো টিকা এখনও আবিষ্কার হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ডেংভাক্সিয়া’ টিকার অনুমোদন দিলেও এতে রয়েছে সীমাবদ্ধতা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্টরা টিকার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গুর টিকা আমাদের দেশের মানুষের দেহে ব্যবহার করা যাবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। তাই, করোনা টিকার মতো ডেঙ্গুর টিকা গণহারে প্রয়োগের ব্যাপারে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত শুধু ‘ডেংভাক্সিয়া’ টিকা অনুমোদন পেয়েছে। এডিস মশাবাহিত এই রোগ প্রতিরোধে ট্রায়ালে আছে আরও পাঁচটি টিকা। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে আছে জাপানের তাকিদা কোম্পানির ‘কিউডেঙ্গা’।

তবে বৈশ্বিক গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান এফএমআই জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ‘ডেংভাক্সিয়া’ ও ‘কিউডেঙ্গা’ অন্তত ২০টি দেশে ডেঙ্গুর টিকা হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। এই ২০টি দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, পেরু ও এল সালভাদর।

যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর সানোফি এবং লুই পাস্তুর ইনস্টিটিউটের ‘ডেংভাক্সিয়া’ টিকার অনুমোদন দিয়েছে। যদিও এই টিকা ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।

এছাড়া, যে রোগীর ডেঙ্গু সংক্রমণের ইতিহাস আছে, যারা ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকায় বসবাস করছেন, কেবল তারাই এই টিকা নিতে পারবেন বলেও জানানো হয়েছে। ফলে, অনুমোদন পাওয়া একমাত্র ডেঙ্গু টিকা ‘ডেংভাক্সিয়া’ সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।

জাপানের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাকিদার ‘কিউডেঙ্গা’ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ব্রাজিল সরকার। গত ১৪ মার্চ ব্রাজিলের ২৮ হাজার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কের ওপর এ টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে তাদের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

দেশের সার্বিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং ডেঙ্গুর টিকা বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন বলেছেন, ডেঙ্গুর টিকার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কয়েকটি দেশে ডেঙ্গুর টিকা অনুমোদন পেয়েছে। সেই দেশগুলোর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিলে আমাদের দেশেও এর প্রয়োগ শুরু করা হবে।

তিনি বলেন, যদিও এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু টিকার কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চলছে। যখন আমরা নিশ্চত হবো, এই টিকা আমাদের দেশের জনগণের জন্য কার্যকরী, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডেঙ্গু টিকার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ বিবেচনায় রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হলেও এখনো ডেঙ্গুর টিকা প্রয়োগের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে না। টিকা প্রয়োগের জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ডেঙ্গুর টিকা এখনো বিশ্বব্যাপী পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। এর পরিপূর্ণ সফলতা পাওয়া গেলে আমরাও তা প্রয়োগ শুরু করব। এ ব্যাপারে আমরা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি।

মন্ত্রী বলেছেন, যেসব দেশ ভ্যাকসিন তৈরি করছে, প্রয়োগ করছে, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। যখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সার্বিকভাবে ডেঙ্গুর জন্য কোনো টিকার অনুমোদন দেবে, আমরা সেই টিকা অবশ্যই আনার চেষ্টা করব। এখনো সে মানের কোনো ডেঙ্গু টিকার সন্ধান পাইনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এখন পর্যন্ত কোনো টিকার সার্বিক অনুমোদন দেয়নি।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে গবেষণা করে টিকা তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগকে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্যও বলেছেন উপাচার্য।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৯ হাজার ৯৯৪ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ হাজার ৪৫৬ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৫১ হাজার ৫৩৮ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯১ হাজার ৯৩৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৪ হাজার ৫৬৭ জন এবং ঢাকার বাইরের ৪৭ হাজার ৩৬৯ জন।

২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ২, মে মাসে ২, জুনে ৩৪ জন এবং জুলাই মাসে ২০৪ জন। চলতি আগস্টের ২০ দিনে মারা গেছেন ২২৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৩ বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হচ্ছে—২০০০ সালে আক্রান্ত ৫৫৫১ জন ও মৃত্যু ৯৩, ২০০১ সালে আক্রান্ত ২৪৩০ ও মৃত্যু ৪৪, ২০০২ সালে আক্রান্ত ৬২৩২ ও মৃত্যু ৫৮, ২০০৩ সালে আক্রান্ত ৪৮৬ ও মৃত্যু ১০, ২০০৫ সালে আক্রান্ত ১০৪৮ ও মৃত্যু ৪, ২০০৬ সালে আক্রান্ত ২২০০ ও মৃত্যু ১১, ২০০৭ সালে আক্রান্ত ৪০৬ ও মৃত্যু নেই, ২০০৮ সালে আক্রান্ত ২১৫৩ ও মৃত্যু নেই, ২০০৯ সালে আক্রান্ত ৪০৪ ও মৃত্যু নেই, ২০১০ সালে আক্রান্ত ৪০৯ ও মৃত্যু নেই, ২০১১ সালে আক্রান্ত ১৩৫৯ ও মৃত্যু ৬, ২০১২ সালে আক্রান্ত ৬৭১ ও মৃত্যু ১, ২০১৩ সালে আক্রান্ত ১৭৪৯ ও মৃত্যু ২, ২০১৪ সালে আক্রান্ত ৩৭৫ ও মৃত্যু নেই, ২০১৫ সালে আক্রান্ত ৩১৬২ ও মৃত্যু ৬, ২০১৬ সালে আক্রান্ত ৬০৬০ ও মৃত্যু ১৪, ২০১৭ সালে আক্রান্ত ২৭৬৫ ও মৃত্যু ৮, ২০১৮ সালে আক্রান্ত ১০১৪৮ ও মৃত্যু ২৬, ২০১৯ সালে আক্রান্ত ১০১৩৫৪ ও মৃত্যু ১৭৯, ২০২০ সালে আক্রান্ত ১৪০৫ ও মৃত্যু ১০৫, ২০২১ সালে আক্রান্ত ২৮৪২৯ ও মৃত্যু ১০৫, ২০২২ সালে আক্রান্ত হন ৬২৩৮২ জন এবং মৃত্যু হয় ২৮১ জনের।

শেয়ারনিউজ, ২১ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে