১০০ কোটি টাকা লাভের কোম্পানির ৮৬ কোটি টাকা লোকসান
নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং বার্ষিক ১০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করার সক্ষমতা ছিল বিবিএস ক্যাবলসের। কালের প্রবাহে কোম্পানিটি এখন ভয়াবহ আর্থিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। কয়েক বছর আগেও শক্তিশালী সরকারি চুক্তি এবং আকাশছোঁয়া শেয়ারের দামের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা এই কোম্পানিটি এখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি কার্যাদেশ কমে আসা, রাজনৈতিক আনুকূল্য হারানোর অভিযোগ এবং চ্যালেঞ্জিং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ—এই সবকিছুর সম্মিলিত প্রভাবে এর কার্যক্রমে "শর্ট সার্কিট" ঘটেছে, যার ফলে লাভজনক ব্লু-চিপ কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বিশাল লোকসানের বোঝায় পরিণত হয়েছে।
কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে আর্থিক ক্ষতির মাত্রা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জন্য বিবিএস ক্যাবলস ৮৬ কোটি টাকা নিট লোকসান দেখিয়েছে। এটি পূর্ববর্তী অর্থবছরের ১৩ কোটি টাকা লোকসানের তুলনায় ৫৬১ শতাংশ বিশাল বৃদ্ধি। কোম্পানির ঐতিহাসিক পারফরম্যান্সের বিপরীতে এই পতন আরও ভয়াবহ; ২০১৯ অর্থবছরে কেবলস প্রস্তুতকারকারী কোম্পানিটি রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৪৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল। মাত্র ছয় বছরেরও কম সময়ে ১৪৫ কোটি টাকা মুনাফা থেকে ৮৬ কোটি টাকা লোকসানে নেমে আসা কোম্পানিটির আর্থিক ভিত্তি সম্পূর্ণভাবে ক্ষয় হওয়ার চিত্র তুলে ধরেছে।
মুনাফার এই ধসের সঙ্গে রাজস্বের তীব্র পতন সরাসরি সম্পর্কিত। ২০২৪=২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির রাজস্ব ৪৬ শতাংশ কমে মাত্র ২১০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে ২০১৯ অর্থবছরে শীর্ষে থাকা অবস্থায় কোম্পানিটির রাজস্ব ছিল প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। এই নিম্নমুখী ধারা ছিল ধারাবাহিক এবং উদ্বেগজনক—অর্থবছর ২০২০-এ রাজস্ব ছিল ৭১৩ কোটি টাকা, যা ধীরে ধীরে অর্থবছর ২১-এ ৬৩৮ কোটি এবং অর্থবছর ২২-এ ৬২৮ কোটি টাকায় নেমে আসে। অর্থবছর ২৩-এ রাজস্ব ৬৫৫ কোটি টাকায় পৌঁছালেও, অর্থবছর ২৪-এ বিক্রি কমে ৩৮৬ কোটিতে নামে এবং সর্বশেষ অর্থবছরে তা আবার অর্ধেকেরও বেশি কমে যায়।
লোকসান বাড়তে থাকায় এবং বিক্রি কমতে থাকায়, বিবিএস ক্যাবলস অর্থবছর ২৫-এর জন্য কোনো ডিভিডেন্ড সুপারিশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার আগের বছর কোম্পানিটি টোকেন হিসেবে ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। এর সর্বোচ্চ ডিভিডেন্ড ঘোষণা—১০ শতাংশ ক্যাশ এবং ১৫ শতাংশ বোনাস—অর্থবছর ১৮-তে করা হয়েছিল, যা কোম্পানিটির লাভজনকতার একটি অতীত যুগের কথা মনে করিয়ে দেয়।
মূল্য-সংবেদনশীল তথ্যে বিবিএস ক্যাবলস এই বিপুল লোকসানের জন্য একাধিক প্রতিকূল কারণকে দায়ী করেছে: রাজস্বে তীব্র পতন, উচ্চ ব্যাংক সুদের হার, ডলারের অস্থিরতা, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে সরকারি টেন্ডারে উল্লেখযোগ্য হ্রাস—যা কোম্পানির রাজস্বের প্রধান উৎস। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের বিক্রির ধারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অর্থবছর ২৫-এর নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অডিটর টি হোসেন অ্যান্ড কোং গুরুতর ত্রুটি চিহ্নিত করেছে এবং কোম্পানির 'চলমান উদ্বেগ' অবস্থাকে মূল নিরীক্ষা বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। নিরীক্ষায় বলা হয়েছে, অর্থবছর ২৪-এর ৩৮৬ কোটি টাকা থেকে অর্থবছর ২৫-এ ২১০ কোটি টাকায় (৪৫.৪০% পতন) নেমে আসা টার্নওভার "নিকট ভবিষ্যতে কোম্পানির কার্যকারিতা বজায় রাখার সক্ষমতার ওপর যথেষ্ট ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।"
কোম্পানিটির প্রাক্তন এক কর্মকর্তা পতনের প্রধান কারণ হিসেবে রাজনৈতিক সংযোগের ভাঙনকে দায়ী করেন। তার মতে, কোম্পানিটির চেয়ারম্যান, যিনি মূলত ভোলা থেকে এসেছেন, তার একসময়কার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেই সময়ে বিবিএস ক্যাবলস বড় আকারের সরকারি চুক্তি সুরক্ষিত করেছিল, বিশেষ করে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য। ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগ এই কোম্পানি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তার ক্রয় করত। কিন্তু সেই রাজনৈতিক গতিশীলতা পরিবর্তন হওয়ায় এবং নতুন চুক্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বিবিএস ক্যাবলস রাতারাতি তার রাজস্বের প্রধান উৎস হারায়।
সরকারি চুক্তি হারানোর পাশাপাশি কোম্পানির ক্রমবর্ধমান ঋণও একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বিবিএস ক্যাবলসের ৬০ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি এবং ২৫৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে। সোনালী ব্যাংক এর সবচেয়ে বড় ঋণদাতা। এই ঋণগুলোর সুদের হার ১২% থেকে ১৬% পর্যন্ত, যা আর্থিক সংকটে থাকা কোম্পানিটির ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে। এক ব্রোকারেজ ফার্মের বিশ্লেষক বলেছেন, উচ্চ সুদের হারের এই পরিবেশে, বিশেষ করে যখন নগদ প্রবাহ কমতে থাকে, ঋণের এমন মাত্রা পরিচালনগত নমনীয়তাকে মারাত্মকভাবে সীমিত করে এবং লোকসানকে আরও গভীর করে।
শেয়ারবাজারে বিবিএস ক্যাবলসের যাত্রা বেশ নাটকীয় ছিল। কোম্পানিটি ২০১৭ সালে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়, প্রতিটি ১০ টাকা দরে দুই কোটি শেয়ার ইস্যু করে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল তাৎক্ষণিক ও তীব্র—প্রথম লেনদেনের দিনেই শেয়ারের দাম ৯০ টাকায় পৌঁছায় এবং এক মাসের মধ্যে ১৫০ টাকায় যায়। কিন্তু এই দ্রুত উত্থান নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির আওতায় আসে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর তদন্তে দেখা যায় যে কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা শেয়ার দর কারসাজিতে জড়িত ছিলেন। এই অসদাচরণের জন্য কমিশন তাদের প্রায় ৬ কোটি টাকা জরিমানা করে। তারপর থেকে নিয়ন্ত্রক কেলেঙ্কারি এবং মূল ব্যবসার অবনতির কারণে শেয়ারটির মূল্য ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে।
সালাউদ্দিন/
পাঠকের মতামত:
- ১০০ কোটি টাকা লাভের কোম্পানির ৮৬ কোটি টাকা লোকসান
- লোকসানের বোঝা বেড়েছে, দুই কোম্পানির ‘নো ডিভিডেন্ড’
- পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের একীভূতকরণ বৈধ: বিনিয়োগকারীদের রিট বাতিল
- শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও বিশ্লেষণে এআই হবে বড় শক্তি
- দুই কোম্পানির বোনাসে শেয়ারে সম্মতি দিল বিএসইসি
- আর্জেন্টিনা বনাম বাংলাদেশ: জমজমাট খেলাটি শেষ, জেনে নিন ফলাফল
- বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিএসইসির খসড়া রুলস পর্যালোচনা বৈঠক
- সৌদিতে হঠাৎ ভারী বৃষ্টির পরে ভূমিধস, সড়ক বন্ধ
- সুদের হার কমানো সম্ভব নয়: গভর্নর
- সাত কলেজ নিয়ে যে সিদ্ধান্তের কথা জানাল মন্ত্রণালয়
- ঋণ সংকটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প: চ্যালেঞ্জের মুখে নারী উদ্যোক্তারা
- সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গঠনের বিরুদ্ধে করা রিট খারিজ
- ৯১ বারের মতো পেছাল রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন
- ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩ সচিবের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
- নিজের অবসর নিয়ে যা বললেন সাকিব
- নির্বাচনের জন্য নিবন্ধন পেল ৮১ দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা
- প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ রেকর্ডে ইসির চিঠি
- 'আমরা ঋণের ফাঁদে পড়েছি; স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়'
- ২.২২ লক্ষ মামলায় আটকা ৪ লাখ কোটি টাকা, চাপের মুখে ব্যাংকিং খাত
- প্রিজনভ্যানে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে আলোচনায় পলক
- খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
- 'শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এআই হবে প্রধান হাতিয়ার'
- দরপতনের ধাক্কা কাটিয়ে শেয়ারবাজারে সবুজের ছোঁয়া
- ৮ ডিসেম্বর ব্লকে তিন কোম্পানির বড় লেনদেন
- ৮ ডিসেম্বর লেনদেনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- আবারও ৪.৫০ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিলেন কোম্পানির এমডি
- ৮ ডিসেম্বর দর পতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ৮ ডিসেম্বর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
- মার্জিন ঋণ হোল্ডারদের তথ্য চেয়েছে বিএসসি
- এজিএমের সময় ও স্থান চূড়ান্ত করেছে কুইন সাউথ টেক্সটাইল
- প্রায় ৬৩ লাখ শেয়ার বণ্টন সম্পন্ন করেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি
- বাবরির জবাবে গীতা পাঠ, তার জবাবে কোরআন তিলাওয়াত
- ট্রাইব্যুনালে হাজির হেভিওয়েট মন্ত্রীরা: হাসিমুখে শাজাহান
- ভারতীয়দের জন্য মার্কিন ভিসায় নতুন কড়া বিধিনিষেধ
- পদোন্নতি নিয়ে দুঃসংবাদ: আইনি জটিলতায় হাজারো শিক্ষক বিপাকে
- হারানো সিম বন্ধ না করলে বড় বিপদ!
- ‘মাইনাস ফোর’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন রুমিন ফারহানা
- চাকরিজীবীদের পে–স্কেল নিয়ে বড় আপডেট
- দুই কোম্পানির স্পটে লেনদেন শুরু
- লেনদেনে ফিরেছে ৪ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত তথ্য জানালো অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ
- বিডি থাই এলুমিনিয়ামের প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ
- ৮৩ বার পরিবর্তন—এবার স্বর্ণের দামে বড় চমক
- শীতে পিরিয়ডের সময় যে ফলগুলো খাবেন না
- জনপ্রিয় অভিনেতা ডিপজলের বিরুদ্ধে বোনদের গুরুতর অভিযোগ
- ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশি টাকায় বিভিন্ন দেশের আজকের টাকার রেট
- শীর্ষ ৫০ ব্যবসায়ী গ্রুপের ঋণের ৩৩ শতাংশই এখন খেলাপি
- রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আর্থিক খাতের নতুন আতঙ্কে শেয়ারবাজার
- আর্থিক ঝুঁকিতে শেয়ারবাজারের তিন তেল বিপনন কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত তথ্য জানাল ঢাকা ডাইং
- খেলাপি কমাতে নতুন পথ খুলে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রথম ধাক্কা খেল জিপিএই ইস্পাত
- ৩৫ হাজার কোটি টাকার মূলধন নিয়েও ব্যাংকের ডিলিস্টিংয়ে সমন্বয়হীনতা
- মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের জন্য সুখবর
- আর্থিক ঝুঁকিতে শেয়ারবাজারের তিন তেল বিপনন কোম্পানি
- সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে ১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা
- শেয়ারবাজারে ব্যাংক এশিয়া ব্রোকারেজ হাউজের বড় বিনিয়োগ
- বোনাস ডিভিডেন্ড পেল কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- চমক দেখাল সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেকের কোম্পানির শেয়ার
- এনসিপিতে জায়গা হচ্ছে না আসিফ মাহমুদের, প্রকাশ্যে দুই উপদেষ্টার দ্বন্দ্ব
- ৫ ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন স্কিম
- বাংলাদেশ বনাম আর্জেন্টিনা : ম্যাচটি সরাসরি দেখুন
- ৭৬টি কম্পনের পর ভূমিকম্পের চরম সতর্কতা
- বাড়তি সময় পাচ্ছে আরও ১১ মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান
- বাংলাদেশ বনাম ব্রাজিল: খেলাটি সরাসরি দেখুন (Live)
শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর
- ১০০ কোটি টাকা লাভের কোম্পানির ৮৬ কোটি টাকা লোকসান
- লোকসানের বোঝা বেড়েছে, দুই কোম্পানির ‘নো ডিভিডেন্ড’









.jpg&w=50&h=35)

.jpg&w=50&h=35)

