ঢাকা, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

২.২২ লক্ষ মামলায় আটকা ৪ লাখ কোটি টাকা, চাপের মুখে ব্যাংকিং খাত

২০২৫ ডিসেম্বর ০৮ ১৬:৪৬:০১
২.২২ লক্ষ মামলায় আটকা ৪ লাখ কোটি টাকা, চাপের মুখে ব্যাংকিং খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থঋণ আদালতগুলোতে জমতে থাকা মামলার পাহাড় এখন ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির সংকেত দিচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি মামলায় ৪ লাখ কোটি টাকার ঋণ বছরের পর বছর ধরে আটকে আছে, যা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আরও চাপে ফেলছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বাড়তি বোঝা তৈরি করছে। এদিকে নতুন মামলার সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও নিষ্পত্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে কম থাকায় ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এস আলম, বেক্সিমকো ও নাসা গ্রুপের মতো বড় খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা বাড়াতে ব্যাংকগুলো বাধ্য হচ্ছে, তবুও আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ আরও বাড়ছে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)-এর তথ্যানুসারে, জুন মাস পর্যন্ত দেশের আদালতগুলোতে ৪,০৭,৪৩৫ কোটি টাকা জড়িত ২,২২,৩৪১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সম্প্রতি, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, এবং নাসা গ্রুপ-এর মতো বড় ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করেছে বেশ কিছু ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শেষ তিন মাসেই মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৭০৮টি বৃদ্ধি পেয়েছে, আর মামলার সাথে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৮৬,৬৭৪ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইন বিভাগ কর্তৃক সংকলিত তথ্য অনুসারে, মার্চ মাস শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৩টি, যেখানে বিবাদের অধীনে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা।

এদিকে মামলার সংখ্যা বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মামলা নিষ্পত্তির হার নতুন মামলা দায়েরের গতির চেয়ে অনেক কম হওয়ায় এই কৌশলে সফলতা সীমিত। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে আদালতগুলো ১১ হাজার ৯৪৪টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে, যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো ২ হাজার ৯১০ কোটি টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ একই সময়ে, ঋণদাতারা ১৪ হাজার ৬৫২টি নতুন মামলা দায়ের করেছে যেখানে ৯৬ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা আটকে আছে। যেখানে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে, ব্যাংকগুলো ১০ হাজার ৬৪টি মামলা নিষ্পত্তি করে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল।

ব্যাংকার এবং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিবাদের অধীন থাকা ঋণের একটি বড় অংশ অনিয়ম বা জালিয়াতির সাথে জড়িত। বারবার মওকুফ এবং পুনঃতফসিলীকরণ প্রকল্প চালু করেও ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে ফিরিয়ে আনা যায়নি। যদিও আইন অনুযায়ী পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাংকগুলোর মামলা করা বাধ্যতামূলক, তবে পদ্ধতিগত বাধাগুলির কারণে অগ্রগতি খুবই ধীর।

তারা বলছেন, অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়া, বিচারকের ঘাটতি এবং জামানত সংক্রান্ত কাগজপত্রের মতো প্রয়োজনীয় নথি আইনজীবীদের কাছে ব্যাংকগুলো সময়মতো সরবরাহ না করায় বিলম্ব আরও বেড়ে যায়। এর পরিণতি ক্রমেই বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে মামলায় আটকে থাকা বিশাল অঙ্কের অর্থ ঋণদাতাদের জন্য বড় ক্ষতি বয়ে আনছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বোঝা সৃষ্টি করছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খান সম্প্রতি বলেছেন যে তার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে আসায় তারা এস আলম গ্রুপ-এর মতো প্রধান ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। ব্যাংকটি এরই মধ্যে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেছে।

এদিকে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে দ্রুত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণদাতাদের অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ১২(৩) ধারা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারি করা এবং হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল করতে দ্রুত শুনানির আবেদন করা। এছাড়াও, ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে তারা যেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ-এর কাছে সিভিল মিসেলেনিয়াস পিটিশন দায়ের করে এই ধরনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে এবং নিষ্পত্তির পথ পরিষ্কার করে।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে