ঢাকা, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

হাসিনার ‘একটানা ৮ সাক্ষাৎকার’— সাংবাদিকতা নাকি পিআর

২০২৫ ডিসেম্বর ০১ ১০:৪২:৩৪
হাসিনার ‘একটানা ৮ সাক্ষাৎকার’— সাংবাদিকতা নাকি পিআর

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে একযোগে প্রকাশিত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আটটি প্রায় একই ধরনের সাক্ষাৎকার এখন তুমুল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তার বিরুদ্ধে দেওয়া সাম্প্রতিক রায়ের আগ মুহূর্তে এই সমন্বিত প্রচার সাংবাদিকতার নৈতিকতা থেকে শুরু করে আঞ্চলিক রাজনীতির জটিলতা—সবকিছুই নতুন প্রশ্ন তুলেছে।

১৭ নভেম্বর ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ হাজার ৪০০ আন্দোলনকারী হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে অনুপস্থিত অবস্থায় শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর ঠিক আগের ১২ দিনে ভারতের আটটি বড় গণমাধ্যম—দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার, পিটিআই ও এনডিটিভি—প্রায় একই প্রশ্নোত্তরের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে।

যদিও প্রতিটি মাধ্যমই সাক্ষাৎকারকে ‘এক্সক্লুসিভ’ দাবি করেছে, প্রশ্ন–উত্তরের গঠন প্রায় হুবহু মিল।ভারতের আউটলুক ইন্ডিয়ার সাবেক উপ-সম্পাদক এবং স্বাধীন সাংবাদিক এসএনএম আবদি একে বলেছেন,“স্বাধীন সাংবাদিকতা নয়, বরং সুপরিকল্পিত পিআর প্রচারণা।”অজানা স্থানে বসে সাক্ষাৎকার দেওয়ার দাবি পুরো ঘটনাকে আরও রহস্যময় করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আবদির মতে, সময়, শব্দচয়ন ও উপস্থাপনার মিল স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়—এটি ছিল পেশাদার ও উচ্চ ব্যয়ের একটি সমন্বিত মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি।

যা বলা হয়েছে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ—যা বলা হয়নি

সাক্ষাৎকারগুলোতে শেখ হাসিনা:

সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন

দায় চাপিয়েছেন নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর

অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছেন

বলেছেন হিন্দুরা বাংলাদেশে এখন ‘অরক্ষিত’

ইসলামী উগ্রবাদের উত্থানের কথা বলেছেন

ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেছেন, কারণ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ

কিন্তু আবদির মতে, যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো অনুপস্থিত ছিল, সেগুলোই বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন—

৫ আগস্ট ২০২৪ তাকে ভারতে প্রবেশের অনুমতি কে দিয়েছিল?

তিনি কি নরেন্দ্র মোদী বা নিরাপত্তা নেতৃত্বের সাথে দেখা করেছেন?

কেন তাঁর অবস্থান ১৫ মাসের বেশি দীর্ঘ হলো?

তিনি কি যুক্তরাজ্য বা অন্য কোথাও আশ্রয় চাইছিলেন?

সরকার পতনের সময় দিল্লির পরামর্শ কী ছিল?

এসব প্রশ্ন না থাকাকে তিনি বলেছেন “সাংবাদিকতার চোখে পড়ার মতো ব্যর্থতা।”

১১ নভেম্বর এসব সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনারকে তলব করে। অভিযোগ—ভারত একটি দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ব্যক্তিকে সাক্ষাৎকার দিতে সহায়তা করেছে।

এরপর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়, যখন অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র শফিকুল আলম ভারতীয় সাংবাদিকদের “বুটলিকার” বলে মন্তব্য করেন। ভারতের প্রেস ক্লাব কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষমা দাবি করে, যা বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে তোলে।

আবদির মতে, বিষয়টি কেবল মিডিয়ার আগ্রহ নয়;ভারত–চীন–যুক্তরাষ্ট্র–উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর টানাপোড়েনের মধ্যে শেখ হাসিনা এখন নিজেই একটি ভূ-রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত হয়েছেন।

তার ভাষায়,“হাসিনা কোনো সাধারণ নির্বাসিত নেতা নন; তাঁর ভবিষ্যৎ আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যের সঙ্গেই গভীরভাবে যুক্ত।”

তিনি নিকারাগুয়ার সাংবাদিক ফ্যাব্রিস লে লুসের উদাহরণ টেনে বলেন—প্রশ্নোত্তরভিত্তিক সাক্ষাৎকার সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ দলিল হওয়া উচিত, প্রচারণা নয়।

আবদিকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—এই সাক্ষাৎকারগুলো গণতান্ত্রিক সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেনি, বরং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বয়ান জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টায় পরিণত হয়েছে, এগুলো ছিল গণপরীক্ষা নয়, বরং গণসংযোগ (PR),তার মতে, ঘটনাটি সাংবাদিকতার ইতিহাসে ব্যতিক্রম হিসেবে সংরক্ষণযোগ্য।

বাংলাদেশ যখন উত্তপ্ত নির্বাচনী বছরে প্রবেশ করছে, তখন ভারতীয় মিডিয়ায় হাসিনাকে ঘিরে এমন সমন্বিত প্রচার ইঙ্গিত দিচ্ছে— তাকে ঘিরে আঞ্চলিক বয়ান ও পাল্টা-বয়ানের লড়াই এখনো তীব্র ও সক্রিয়।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে