ঢাকা, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করল বাংলাদেশ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৪:৩৪:২৮
যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির জটিলতায় বাংলাদেশ থেকে ডাকযোগে পার্সেল পাঠানো দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তর গত ২৮ আগস্ট থেকে এ স্থগিতাদেশ কার্যকর করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের ‘ডি মিনিমিস’ নিয়ম অনুযায়ী, ৮০০ ডলার বা তার কম মূল্যের পণ্য শুল্কমুক্ত অবস্থায় প্রবেশ করত। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই নীতি বাতিল করে দেওয়ায় ২৯ আগস্ট থেকে সব ধরনের আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপ শুরু হয়। হঠাৎ এই পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা বিপাকে পড়েছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি এবং বিবিসি জানায়, বাংলাদেশসহ অন্তত ৮৮টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রগামী ডাক পার্সেল সেবা স্থগিত বা সীমিত করেছে। ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ)-এর তথ্য অনুযায়ী, সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর মাত্র এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ডাকযোগে পাঠানো পার্সেলের সংখ্যা ৮১ শতাংশ কমে গেছে।

বাংলাদেশের অনলাইন উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই স্থবিরতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ঢাকার মিরপুরের অনলাইন হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘ফাইনরি’-র মালিক দা চিং বলেন, “এই মাসের শুরু থেকে আমার পাঠানো প্রতিটি পার্সেল ফেরত এসেছে। ডাকঘর থেকে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে আর পার্সেল নেওয়া হচ্ছে না। এতে গ্রাহকদের কাছে আমি বিপাকে পড়েছি।”

পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ীরাও একই অভিজ্ঞতার কথা জানান। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ পাঠাতে না পেরে তারা কয়েকটি আন্তর্জাতিক অর্ডার বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, বেসরকারি কুরিয়ারের খরচ সরকারি ডাক ব্যবস্থার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি, যা ব্যবসার জন্য টেকসই নয়।

শুধু ব্যবসায়ী নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও এটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর এক অভিভাবক বলেন, তিনি নিয়মিত ছেলের কাছে পোশাক, শুকনো খাবার ও বই পাঠাতেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন। তিনি জানান, “পোস্ট অফিসই ছিল আমাদের সাশ্রয়ী বিকল্প। এখন কুরিয়ারের ব্যয় বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”

বর্তমানে ডিএইচএল ও ফেডেক্সের মতো বেসরকারি কুরিয়ার কোম্পানিগুলো কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে খরচ বেড়ে গেছে তিনগুণের বেশি। এক গ্রাহক দীপঙ্কর রায় জানান, আগে ডাকঘরের মাধ্যমে ২–৩ হাজার টাকায় ২ কেজি পার্সেল পাঠানো যেত, এখন বেসরকারি কুরিয়ারে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭–১০ হাজার টাকা।

ফেডেক্সের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “১০০ ডলারের নিচের পার্সেলে নতুন শুল্ক নেই। তবে এর বেশি মূল্যের পণ্যে ৩০ শতাংশ কর আরোপ হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা পার্সেল পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন।”

বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পারভীন বানু জানান, “আমরা মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, খুব দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে এবং পার্সেল সেবা আবার চালু করা যাবে।”

সিরাজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে