ঢাকা, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

বড় সুখবর পেতে পারে ফিলিস্তিন

২০২৫ জুলাই ২৮ ১২:৫৯:৫৪
বড় সুখবর পেতে পারে ফিলিস্তিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২৮–২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘ফিলিস্তিন প্রশ্ন সমাধান ও দুই-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের বাস্তবায়ন’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সৌদি আরব ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন গাজায় মানবিক বিপর্যয় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি শুধু একটি কূটনৈতিক আয়োজন নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য পথচিত্র।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন, যার মধ্যে ৫০ জন ছিলেন ফরাসি নাগরিক। এই ঘটনার পর থেকেই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫৯ হাজার ফিলিস্তিনি, ধ্বংস হয়েছে গাজার অবকাঠামো ও সামাজিক কাঠামো। এমন প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন যে, ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে, যা সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ঘোষণা করা হবে।

সৌদি আরব বরাবরই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে আঞ্চলিক শান্তির জন্য একটি ‘কৌশলগত প্রয়োজন’ বলে উল্লেখ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, সৌদি রাজ্য সবসময় ন্যায়সঙ্গত শান্তি অর্জনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিয়ে আসছে। তার মতে, এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করা, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

এদিকে সম্মেলনের আগে রিয়াদ আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মানাল রাদওয়ান বলেন, ‘ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধানই হলো নতুন আঞ্চলিক শৃঙ্খলার মূল ভিত্তি, যেখানে পারস্পরিক স্বীকৃতি ও সহাবস্থান থাকবে।’ একইভাবে জাতিসংঘে স্লোভেনিয়ার প্রতিনিধি স্যামুয়েল জবোগার বলেন, এই সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য হলো দুই-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহায়তা সংগ্রহ করা।

এই মুহূর্তে ১৯৩টি জাতিসংঘ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্স এই স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম জি-৭ দেশ হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে স্লোভেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ের মতো দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্য বলেছে, তারা দুই-রাষ্ট্র সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং প্রয়োজনে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

সম্মেলনে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি ঘোষণা প্রত্যাশিত না হলেও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনা বলে উল্লেখ করেছে ফরাসি কূটনৈতিক মহল। সম্মেলনটি চারটি মূল থিম ঘিরে পরিচালিত হবে এবং নিরাপত্তা, প্রশাসনিক সংস্কার, মানবিক সহায়তা ও যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনের ওপর ভিত্তি করে গঠিত ৮টি ওয়ার্কিং গ্রুপ এতে কাজ করবে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সম্মেলন আয়োজকদের একটি চিঠি দিয়েছেন, যেখানে তিনি ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ, জিম্মি মুক্তি, পাঠ্যপুস্তক সংস্কার ও এক বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে পুরোপুরি নিরস্ত্রীকৃত এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সক্ষম।

এদিকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই সম্মেলনের কড়া সমালোচনা করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফ্রান্সের স্বীকৃতিকে “সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা” বলে মন্তব্য করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন এটি ইরানের পুতুল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই সিদ্ধান্তকে হামাসকে উৎসাহ দেওয়ার সমান বলে উল্লেখ করেছেন।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফ্রান্সের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। বিশেষত মুসলিম ও আরব দেশগুলোকে উৎসাহিত করা হবে যেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি ঘটলে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এগিয়ে আসে। হামাসকে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কাঠামো থেকে বাদ দেওয়া, ‘পে-ফর-স্লে’ কর্মসূচি বাতিল ও প্রশাসনিক সংস্কার নিশ্চিত করাই এই সম্মেলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

সব মিলিয়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলন মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘমেয়াদি সংকট নিরসনে একটি কূটনৈতিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদিও বাস্তবায়নের পথ দীর্ঘ ও জটিল, তবু আন্তর্জাতিক ঐক্য এবং সম্মিলিত সংকল্প একটি শান্তিপূর্ণ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পথে ইতিবাচক ইঙ্গিত হতে পারে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে