ঢাকা, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

জনগণের সরকার কিন্তু বৈঠকে জনগণের কণ্ঠ কোথায়!

২০২৫ জুলাই ২৮ ১২:৪৮:১০
জনগণের সরকার কিন্তু বৈঠকে জনগণের কণ্ঠ কোথায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ একটি সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গণতন্ত্রের মূল আত্মা হলো জনগণের মতামত, অংশগ্রহণ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অথচ আমরা লক্ষ্য করি, দেশে যত বড় বড় সংস্কারমূলক বৈঠক বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় — যেমন নির্বাচন কমিশন সংস্কার, রাজনৈতিক সমঝোতা কিংবা সংবিধান সংশোধনের মতো বিষয় — সেখানে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিগণ মূলত রাজনৈতিক দলের মনোনীত কিছু ব্যক্তি। প্রশ্ন হলো, এই প্রতিনিধিগণ কি সত্যিই বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করেন?

রাজনীতিবিদদের সীমিত পরিসর

প্রতিটি দলের নিজস্ব এজেন্ডা, রাজনৈতিক স্বার্থ এবং কাঠামোগত বাধ্যবাধকতা থাকে। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা অনেক সময় জনগণের সার্বিক স্বার্থের চেয়ে দলীয় অবস্থানকে প্রাধান্য দেন। এতে সিদ্ধান্ত হয় গোষ্ঠীকেন্দ্রিক, জাতীয় নয়। অথচ সাধারণ মানুষ — কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, নারী, যুবক, সংখ্যালঘু, ভিন্নমতের নাগরিক — এদের কণ্ঠ কোথায়?

ইচ্ছা করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভিন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সুযোগের জায়গায় রয়েছে। যেহেতু তারা অরাজনৈতিক এবং জনগণের সরকার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে, তারা চাইলে সংস্কারমূলক বৈঠকগুলোতে জনঅংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলো লাইভ সম্প্রচার করা যেতে পারে

উন্মুক্ত মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে (অনলাইন/অফলাইন)

সুশীল সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নাগরিক সংগঠন, পেশাজীবী, তরুণ প্রতিনিধি — এদের সরাসরি মতামত রাখার সুযোগ তৈরি করা যায়

জনগণের ভোট বা জরিপ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তের আগে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা যেতে পারে

জনগণের মূল্যায়ন ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ গণতন্ত্রবিরোধী

যে কোনো সরকারই হোক — নির্বাচিত, তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন — যদি তারা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মত নিয়ে জাতীয় সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা "গণতন্ত্র" নয়, বরং "দলতন্ত্র"। জনগণের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ গণতান্ত্রিক চর্চার পরিচায়ক।

জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে কী হয়?

সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা থাকে না

সাধারণ মানুষ মনে করে, তাদের কথা কেউ শোনে না

রাজনৈতিক এলিটদের প্রতি অনাস্থা বাড়ে

সংস্কার কার্যকর হয় না, কারণ তাতে জনগণের মালিকানা থাকে না

ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক উত্তেজনা বা বৈরিতা বাড়ে

প্রস্তাবিত কিছু করণীয়

১. জনমত জরিপ চালু করা : রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আগে প্রাতিষ্ঠানিক জরিপ চালু করা

২. সংলাপে নাগরিক প্রতিনিধি রাখা : শুধুই রাজনৈতিক নেতা নয়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা

৩. সামাজিক মিডিয়ায় উন্মুক্ত মত গ্রহণ : ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মত প্রকাশের সুযোগ

৪. জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে খোলামেলা আলোচনা সভা : Grassroots থেকে মত সংগ্রহ

৫. গণশুনানির আয়োজন : বিশেষ করে যখন আইন সংশোধনের প্রশ্ন আসে

গণতন্ত্র মানেই কেবল রাজনৈতিক নেতা বা দল নয় — গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন, জনগণের মত, জনগণের সিদ্ধান্ত। তাই জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের স্বর ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করলে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে বেইমানি হয়ে দাঁড়ায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই প্রক্রিয়ায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে — যেখানে সিদ্ধান্ত আসবে জনগণের মতামত, তথ্য এবং অংশগ্রহণের ভিত্তিতে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে