ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
Sharenews24

৭ কারণে ইরানকে হারানো সম্ভব না

২০২৫ জুন ১৮ ০৯:৪১:৪২
৭ কারণে ইরানকে হারানো সম্ভব না

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইসরায়েল কখনো কল্পনাও করেনি, এত বড় প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। রাজধানী তেলআবিবের কিছু অংশ ইরানি হামলায় এমনভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, যেন তা ফিলিস্তিনের গাজার কোনো এলাকা। অন্যদিকে, তেহরানও ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখন প্রশ্ন—ইরান ও ইসরায়েল কি বড় পরিসরের যুদ্ধে জড়াবে? যুক্তরাষ্ট্র কি সেই সংঘাতে অংশ নেবে? ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান কি হার মানবে?

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এমন কিছু কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক শক্তি রয়েছে, যার ফলে দেশটিকে হারানো প্রায় অসম্ভব। এখানে তুলে ধরা হলো এমন সাতটি কারণ, যা ইরানকে প্রায় ‘অজেয়’ করে তোলে।

১. হরমুজ প্রণালি: কৌশলগত সোনার খনি

ইরানের সবচেয়ে বড় শক্তি তার অস্ত্রভাণ্ডার নয়, বরং একটি ভৌগোলিক সম্পদ—হরমুজ প্রণালি। মাত্র ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত এই জলপথ দিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০% জ্বালানি পরিবহন হয়। এই অঞ্চল ঘিরে থাকা সাতটি দ্বীপ ইরানের নিয়ন্ত্রণে, যা তাকে ভূরাজনৈতিকভাবে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। ইরান এই প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিলে পশ্চিমা বিশ্ব চরম উদ্বেগে পড়ে যায়।

২. তিন মহাদেশের সংযোগস্থলে অবস্থান

ইরান ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত। উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর, আর দক্ষিণে পারস্য ও ওমান উপসাগর তাকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক সীমান্ত দেয়। এই কৌশলগত অবস্থান ইরানকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক বিশেষ সুবিধায় রেখেছে। পাঁচ শতাব্দী ধরে একই সীমান্ত ধরে টিকে থাকা রাষ্ট্র হিসেবে এর স্থিতিশীলতা নজিরবিহীন।

৩. ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তি

ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ ২,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা শুধু ইসরায়েল নয়, ইউরোপের অনেক অংশও আঘাত হানতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রও স্বীকার করেছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মিসাইল ভাণ্ডার সবচেয়ে আধুনিক ও বিস্তৃত। ড্রোন প্রযুক্তিতে ইরান এখন বিশ্বসেরা। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ইরানি ড্রোন ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

৪. প্রাকৃতিক দুর্গ: পাহাড় ও মরুভূমি

পশ্চিম ও দক্ষিণে জাগরোস, আর উত্তরে আলবোর্জ পর্বতমালা ইরানকে প্রাকৃতিক দুর্গে রূপ দিয়েছে। এগুলো পেরিয়ে ইরানে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব। এমনকি কেউ পাহাড় পেরিয়ে এলেও সামনে থাকে ভয়ানক উত্তপ্ত লুত মরুভূমি, যা বিশ্বের অন্যতম গরম অঞ্চল। এতে সামরিক অভিযান চালানো অত্যন্ত কঠিন।

৫. ভূগর্ভস্থ সম্পদের ভাণ্ডার

বিশ্বের অন্যতম বড় তেল ও গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে ইরানে। বিশ্ব তেল রিজার্ভের প্রায় ১০% ও গ্যাসের ১৫% এখানেই অবস্থিত। এই শক্তি ইরানকে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়, বিশেষ করে জ্বালানির বাজারে।

৬. শক্তিশালী মিত্রতা: রাশিয়া ও চীন

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও চাপে পড়েও ইরান তার কৌশলগত মিত্র রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার সময় এই দুই পরাশক্তি প্রকাশ্যে বা পরোক্ষভাবে ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে, যা ইরানকে কূটনৈতিকভাবে আরও সাহসী করে তুলেছে।

৭. ছায়াযুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও নেটওয়ার্ক

ইরান সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে ‘ছায়াযুদ্ধ’ কৌশলে দক্ষ। ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ নামে পরিচিত তার প্রক্সি নেটওয়ার্ক—যেমন ফিলিস্তিনে হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ, সিরিয়ায় ফাতেমিয়ুন ব্রিগেড, ইরাকে আল-বদর মিলিশিয়া ও ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীরা—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

প্রাচীন পারস্য থেকে আধুনিক ইরান—হাজার বছরের ইতিহাসে নানা সংঘাত পেরিয়ে এসেও দেশটি কখনো বাইরের শক্তির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে যায়নি। সেই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা আগামীতেও বজায় থাকবে কিনা, তা নির্ধারণ করবে সময়।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে