ঢাকা, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও প্রতীক হারানোর পেছনের ঘটনা

২০২৫ জুন ০১ ১৩:৫৪:৫৫
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও প্রতীক হারানোর পেছনের ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) অবিলম্বে জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেবে। তবে দলটির দীর্ঘদিনের ব্যবহারকৃত ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আদালত সরাসরি কোনো আদেশ দেয়নি। প্রতীক বরাদ্দের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

এই রায় ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন, আইন বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন বিশ্লেষক এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে—জামায়াত তাদের বহুল আলোচিত ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরিয়ে পাবে কি না।

১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে দলের জন্য প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দ চাওয়া হয়। কমিশন তাদের আবেদন মঞ্জুর করে এবং এরপর থেকে জামায়াত সব সংসদীয় নির্বাচনে এই প্রতীক ব্যবহার করে আসছিল। দলটির দাবি, ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও তারা এই প্রতীকেই অংশগ্রহণ করেছিল।

এই প্রতীকটি জামায়াতের সঙ্গে এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়ে যে, এটি দলটির ‘পরিচিতি’তে পরিণত হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতীক ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। কারণ, দাঁড়িপাল্লা হচ্ছে বিচার ব্যবস্থার প্রতীক, যা বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামেও ব্যবহৃত হয়।

২০১৩ সালে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া একটি রিটের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন বাতিল করে। এরপর ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইসিকে একটি চিঠি পাঠানো হয়, যেখানে বলা হয়, দাঁড়িপাল্লা প্রতীক কেবল ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।

এই চিঠির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৯ই মার্চ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা-২০০৮ সংশোধন করে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি বাতিল করে দেয় এবং এর গেজেট প্রকাশ করে। ফলে জামায়াতসহ কোনো রাজনৈতিক দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী এই প্রতীক ব্যবহার করতে পারে না।

জামায়াতের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বিবিসিকে জানান, সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ছিল প্রশাসনিক, এটি কোনো বিচারিক রায় নয়। ফলে এর আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। তৎকালীন নির্বাচন কমিশন এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে ভিত্তি করেই দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাতিল করে। তাই প্রতীক ফেরত পাওয়ার জন্য তারা এবার আদালতের পর্যবেক্ষণ চেয়েছে।

আদালতও এবার প্রতীকের বিষয়ে কোনো সরাসরি নির্দেশ না দিয়ে ইসিকে বলেছে, তারা যেন বিষয়টি নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিবেচনা করে। অর্থাৎ, ইসির হাতে এখন যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে জামায়াতকে প্রতীক ফেরত দেওয়ার।

নিবন্ধন ফিরে পেলেও দলীয় প্রতীক ফিরে পেতে জামায়াতকে আইনি ও প্রশাসনিক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন বলেন, এ প্রক্রিয়ায় ইসিকে প্রথমে বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। এরপর সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠাতে হবে। ভেটিং শেষে মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত আসলে ইসি তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে পারবে।

এই প্রক্রিয়া কত দ্রুত হবে তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং আইনি ব্যাখ্যার ওপর।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে