ঢাকা, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
Sharenews24

সরকারি চাকরি আইনে বড় পরিবর্তন, বিভাগীয় মামলা ছাড়াই বরখাস্তের বিধান

২০২৫ মে ২০ ০৬:২৪:২৯
সরকারি চাকরি আইনে বড় পরিবর্তন, বিভাগীয় মামলা ছাড়াই বরখাস্তের বিধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ছাড়াই চাকরিচ্যুত করার বিধান যুক্ত হচ্ছে সরকারি চাকরি আইনে। সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার এই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সংশোধিত আইনের খসড়া প্রস্তুত করে। এ নিয়ে বিতর্কের পর চারজন উপদেষ্টার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এখন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী, শৃঙ্খলাভঙ্গ বা দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে নোটিশ দেওয়া হবে এবং সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে হবে। এরপর ২০ থেকে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে। নোটিশের জবাব না এলে অনুপস্থিতিতেই অভিযোগের নিষ্পত্তি হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই প্রক্রিয়ায় বিভাগীয় মামলার প্রয়োজন হবে না।

বর্তমান আইনে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগে এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে আপিলসহ প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুযোগ পান। ফলে প্রক্রিয়াটি প্রায়ই দুই বছরের বেশি সময় নেয়।

গণ-অভ্যুত্থানের পর সরকারি প্রশাসনে অসন্তোষ তৈরি হয়। বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তারা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেন। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় এবং অনেককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে। পুলিশের বিভিন্ন স্তরের ১৮০ জন কর্মকর্তা এখনো কাজে ফেরেননি, অনেকে অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।

সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তা ছুটি না নিয়ে বা যৌক্তিক কারণ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, অন্যকে অনুপস্থিত থাকতে প্ররোচিত করলে, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে বা কর্তব্য পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তির আওতায় বরখাস্ত, পদাবনতি বা বেতন কমানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

পূর্বের একটি বিতর্কিত অধ্যাদেশ—সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯—এর কিছু ধারা এই আইনের খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এটিকে ‘কালাকানুন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, “এই ধরনের আইন সংবিধানবিরোধী ও কালাকানুন।” তাঁর মতে, বর্তমান সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল বিতর্কিত আইন বাতিল করা, অথচ এখন তারা আরও একটি বিতর্কিত আইনের পথে এগোচ্ছে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া মনে করেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই সরকার এই সংশোধন আনছে। তবে তিনি সতর্ক করেন, “এই বিধান যেন স্বাভাবিক প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় বা প্রতিশোধমূলকভাবে ব্যবহার না হয়। অভিযোগ নিষ্পত্তির আগে অবশ্যই নিরপেক্ষ তদন্ত ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকতে হবে।”

আলীম/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে