ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

আইপিওতে শূন্য আগ্রহ: কমিশনের উপর আস্থার সংকটে ভোগছে শেয়ারবাজার

২০২৫ মার্চ ০৬ ২১:২৪:৩০
আইপিওতে শূন্য আগ্রহ: কমিশনের উপর আস্থার সংকটে ভোগছে শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৫ সালের ৬ মার্চ, বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্ব এবং কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসি কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, যা কমিশনের কার্যক্রম, নেতৃত্ব এবং শেয়ারবাজারের অবস্থা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।মূল অভিযোগ:

বিএসইসির উপর আস্থাহীনতা এবং শেয়ার বাজারের অবস্থা: বিএসইসি কর্তৃক পরিচালিত শেয়ার বাজারে গত ৬ মাসে কোনো মৌলভিত্তিক (ভাল পারফর্মিং) কোম্পানি আইপিও (Initial Public Offering) এর মাধ্যমে শেয়ার বাজারে আসার আগ্রহ দেখায়নি। এই কারণে শেয়ার বাজার অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। এটি কমিশনের উপর আস্থাহীনতার ফলস্বরূপ হয়েছে। আরও উল্লেখযোগ্য যে, এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে আস্থাশীল, যা কমিশনের ক্ষমতা এবং কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে।

কমিশনের দুর্ব্যবহার এবং শৃঙ্খলাভঙ্গ: সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় যে, বর্তমান কমিশন নিয়মিতভাবে তার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে। তারা কমিশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের "গার্মেন্টস কর্মী", "ফোরম্যান", "কুয়োরব্যাঙ", "চোর" ইত্যাদি বলে গালমন্দ করে, যা একটি অত্যন্ত অসৎ এবং অমানবিক আচরণ। এছাড়া, তারা মৌখিক নির্দেশনা দেয় এবং সেই নির্দেশনা না মানলে কর্মকর্তাদের শোকজ (Show Cause) দেওয়ার হুমকি দেয়। অথচ, তারা দাবি করে যে তারা সবসময় আইন অনুযায়ী কাজ করবে।

কমিশনের অনৈতিক এবং বেআইনী সুবিধা গ্রহণ: অভিযোগে বলা হয় যে, কমিশনের চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য কমিশনাররা নিজেদের জন্য অপ্রয়োজনীয় সুবিধা গ্রহণ করছেন, যা কমিশনের বিধি অনুযায়ী ঠিক নয়। উদাহরণস্বরূপ, চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের জন্য নিয়মিত আপ্যায়ন বরাদ্দ রয়েছে, কিন্তু তারা প্রতিমাসে এই বরাদ্দের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ উত্তোলন করছেন। চেয়ারম্যান প্রতিমাসে ২৫,০০০ টাকা এবং কমিশনাররা ১৫,০০০ টাকা করে উত্তোলন করছেন, যা কমিশনের নিয়মবহির্ভূত।

পদোন্নতি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি অবহেলা: বিএসইসি-তে কর্মরত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না এবং তাদের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে অহেতুক কালক্ষেপণ করা হচ্ছে এবং কমিশনের যোগ্য কর্মকর্তাদের চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে। আরও অভিযোগ রয়েছে যে, কমিশন নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিচ্ছে এবং কমিশনে জনবল সংকট থাকলেও তারা পদোন্নতি না করে প্রেষণ (temporary transfer) দিয়ে শূন্য পদ পূর্ণ করার চেষ্টা করছে।

অনুমোদন ছাড়াই পরিচালক নিয়োগ: কমিশন কিছু তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ করছে, যা আইন বহির্ভূত। এমনকি এই নিয়োগের জন্য ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট (Fit and Proper Test) না করেই পরিচালক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এটি শেয়ার বাজারের স্বার্থের বিপরীত এবং দুর্বল পরিচালনার প্রমাণ।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের অবহেলা: বিএসইসি কিছু বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তাদের অর্জিত সুদ প্রদান না করে তাদের বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী। এছাড়া, কমিশন বিনিয়োগকারীদের কাছে যে Customer Consolidated Account (সিসিএ) খোলা হয়েছে, সেখানে উপার্জিত সুদ প্রদান না করে তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করছে।

কমিশনের কর্মকর্তাদের উপর চাপ এবং হয়রানি: কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। বিএসইসি কর্তৃপক্ষ তাদের উপর দোষ চাপিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বেআইনী ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বাধ্য করছে।

কমিশনের পদত্যাগের দাবি: বিএসইসি কর্মচারীদের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, বর্তমান কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। তাদের দাবি, বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং অন্য কমিশনারদের নেতৃত্বে শেয়ার বাজারের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব নয়। তারা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বৈরাচারী এবং দাসসুলভ আচরণ করছেন, যা কমিশনের কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। তারা কমিশনের কর্মকর্তাদের উপর হামলারও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশনের পদত্যাগের দাবি করা হয়েছে। তাদের দাবি, বর্তমান কমিশনের অধীনে শেয়ার বাজারের উন্নতি সম্ভব নয় এবং কমিশনের কর্মকাণ্ডের কারণে শেয়ার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা চান, একজন অভিজ্ঞ এবং যোগ্য চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ করা হোক, যারা শেয়ার বাজারের জন্য কাজ করবেন। তারা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কমিশন হিসেবে বিএসইসিকে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন।কর্মবিরতির ঘোষণা:

এই অবস্থায়, বিএসইসি কর্মচারীরা ঘোষণা করেছেন যে, তারা আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে কর্মবিরতি পালন করবেন। তারা কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও অন্যান্য কমিশনারদের পদত্যাগের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে চান। তাদের দাবি না মানলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে