ঢাকা, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

শেখ সেলিম, তাপস, নানক এবং মির্জা আজমেরের গোপন ষড়যন্ত্র উন্মোচন

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৩:৩৫:২৮
শেখ সেলিম, তাপস, নানক এবং মির্জা আজমেরের গোপন ষড়যন্ত্র উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানায় ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শামসুল আলম চৌধুরী (কর্নেল শামস) সন্দেহভাজন হিসেবে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন। তিনি তখন বিডিআর অস্ত্রাগারের দায়িত্বে ছিলেন এবং ওই হত্যাকাণ্ডে তার ব্যাটালিয়ন মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

বিডিআর বিদ্রোহের আগে কর্নেল শামস ছিলেন বিদ্রোহীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাপনায় সহায়তাকারী। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে, বিডিআর দরবার শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে, ৪৪ রাইফেলসের সিপাহি মঈন একটি অস্ত্র নিয়ে মঞ্চে উঠে বিডিআরের ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল শাকিলের মাথায় অস্ত্র তাক করেন। তখন বিডিআরের ডিজি কর্নেল শামসের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “শামস, এই অস্ত্র তোমার ব্যাটালিয়নের।” এরপর ঘটনার দ্রুততম সময়ে, খবরে আসে, সিপাহি মঈনের হাতে থাকা অস্ত্রটি ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের অস্ত্র ছিল।

তদন্তে জানা গেছে যে, ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সদস্যরা বিদ্রোহের জন্য একাধিক সভা করেছে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের, যেমন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এবং মির্জা আজমের। ২০০৯ সালের জাতীয় তদন্ত কমিটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, “বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অধিনায়ক কর্নেল শামসসহ ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সদস্যদের ভূমিকা সন্দেহজনক।”

২৫ ফেব্রুয়ারি, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিন, অস্ত্রাগারের দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল শামস। তদন্তে জানা যায়, তিনি সহিংসতার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ৪৪ রাইফেলসের সদস্যদের হাতে তুলে দেন, এবং তাদের মাধ্যমে এটি অন্যদেরও সরবরাহ করেন। বিশেষত, যখন বিদ্রোহীরা অস্ত্র নিতে আসে, তখন কর্নেল শামস বাধা দেননি এবং তাদের অস্ত্র নিতে সহজতর করে দেন।

কর্নেল শামসের সম্পর্ক ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে, এবং তিনি তাকে নানা সময়ে সহায়তা করেছিলেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি বিশেষভাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং অন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন। আরও জানা যায়, শামস ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামে ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্স ইনটেলিজেন্স) এর প্রধান কো-অর্ডিনেটর অফিসার ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

কর্নেল শামস অবশেষে ২০১৯ সালের ২ আগস্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে অবসর নেন। তবে এই অবসর গ্রহণের সময়েও তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন, এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। তিনি পিলখানায় ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন, তবে আদালতে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্নেল শামসকে পদোন্নতি দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) এর পরিচালক বানান এবং পরে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দেন। এমনকি, তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি।

এছাড়াও, কর্নেল শামসের প্রভাব ও তার রাজনৈতিক কার্যক্রমের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করেছেন, বিশেষত চট্টগ্রামে আ জ ম নাছিরের প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।

আলম/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে