ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট: প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধাসমূহ

২০২৫ জানুয়ারি ২১ ১৭:৪১:৩৮
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট: প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধাসমূহ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট বলতে এমন একটি সংসদ ব্যবস্থা বোঝানো হয়, যেখানে আইন প্রণয়নের জন্য দুটি আলাদা কক্ষ থাকে—একটি উচ্চ কক্ষ এবং অন্যটি নিম্ন কক্ষ। এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নিশ্চিত করা, যাতে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া আরও সঠিক ও সতর্কভাবে হয়। নিম্ন কক্ষে পাস হওয়া কোনো আইন ভুল বা ক্ষতিকর হলে, উচ্চ কক্ষ সেটিকে প্রতিরোধ করতে পারে।

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের গঠন ও কার্যক্রম:

- সাধারণত জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সদস্যরা এখানে বসেন। তাঁদের দায়িত্ব থাকে আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন।

- এটি জনগণের জন্য প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে, যেহেতু তাদের মাধ্যমে জনগণের মতামত ও চাহিদা প্রতিফলিত হয়।

- এই কক্ষের সদস্যরা সাধারণত নির্দিষ্ট নিয়মে নির্বাচিত হন, যা দেশের রাজনীতি এবং সাংবিধানিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে। কিছু দেশে এটি নির্বাচন দ্বারা হয়, আবার কিছু দেশে এটি নির্ধারিত হয় সরকার বা বিশেষ কর্তৃপক্ষ দ্বারা।

- উচ্চ কক্ষের ভূমিকা হলো, আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় ভারসাম্য রাখা এবং যে কোনো ভুল বা অসম্পূর্ণ আইন রোধ করা।

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের সুবিধাসমূহ:

- দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টে দুটি কক্ষের মধ্যে একটি চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স ব্যবস্থা থাকে, যাতে একটি কক্ষে পাস হওয়া ভুল বা ক্ষতিকর আইন অন্য কক্ষে আটকানো যায়। এটি সংসদীয় ব্যবস্থাকে আরও সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে।

- একটি কক্ষে সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকে, তবে উচ্চ কক্ষে অন্যান্য শ্রেণি বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকে। এর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সংসদে নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সমাজের বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক বা অন্য বিশেষ শ্রেণির মানুষরা পার্লামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

- দুইটি কক্ষে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া হওয়ার কারণে আইনগুলো আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয়। কোনো প্রস্তাবিত আইন যদি ভুল হয়, তবে তা সংশোধন বা প্রতিরোধের সুযোগ থাকে।

- অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। এর ফলে কোনো একটি দল বা গোষ্ঠী এককভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারবে না, যা স্বৈরাচারের সম্ভাবনা কমায়।

বাংলাদেশে একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজনীয়তা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে এর কয়েকটি সুবিধার কারণে:

- বাংলাদেশে সাধারণত কোনো দল এককভাবে ৫০% ভোটও পায় না। অর্থাৎ অনেক মানুষের প্রতিনিধিত্বের অভাব রয়েছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা এই প্রতিনিধিত্বের সমস্যা সমাধান করতে পারে। - বর্তমান একক কক্ষের পার্লামেন্টে কিছু দলের প্রভাব অত্যধিক বেশি হয়ে থাকে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট ব্যবস্থা থাকলে এতে আরও শক্তিশালী ভারসাম্য তৈরি হবে, যা সরকারের বিকেন্দ্রীকরণে সাহায্য করবে। - অনেক সময় দেশের বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিকরা সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন না। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাউন্সিলরদের মতামত নিতে একটি উচ্চ কক্ষ খুবই প্রয়োজনীয়। এসব মানুষ যারা দেশের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাদের একটি প্ল্যাটফর্ম থাকবে।

- দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট দেশটির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গভীরতা আনে এবং সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

- কিছু দেশে, যেমন ভারতে বা যুক্তরাজ্যে, ছোট দলগুলো বড় দলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে, যা কখনো কখনো সমস্যার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে কিছু ছোট দল বড় দলের সিদ্ধান্তকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। এটি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে, সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখবে এবং একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে