ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ঘুষ দিয়ে আইপিও নেয়া কলঙ্কের এশিয়াটিকের আবেদন শুরু কাল

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১১:০৫:১৫
ঘুষ দিয়ে আইপিও নেয়া কলঙ্কের এশিয়াটিকের আবেদন শুরু কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-কে ঘুষ দিয়ে আইপিও বাগিয়ে নেওয়া কলঙ্কের এশিয়াটিক ফার্মার আবেদন শুরু হচ্ছে রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি)। যা চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যে কোম্পানিটিকে আইওয়াশের জন্য জরিমানা করে ছিল পাপমুক্তির পূর্বপরিকল্পনা মাত্র। এরপর বিশেষ ব্যবস্থায় কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

এশিয়াটিক নিয়ে থাকা কয়েক পর্বের নিউজের মধ্যে আগামি পর্বে থাকছে কিভাবে ও কত টাকা ঘুষ দিয়ে আইপিও টিকিয়ে রাখা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে প্রধান সমস্যা বিনিয়োগকারীরা। তারা যে কোনো কোম্পানির আইপিওতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেটার যদি অস্তিত্ব নাও থাকে। কারণ আইপিওতে মুনাফা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে আইপিও করা সেসব বিনিয়োগকারীরাই পরবর্তিতে ওইসব পঁচা কোম্পানির জন্য কমিশনের দোষারোপ করে। অথচ আইপিওতে আবেদন না করে পঁচা কোম্পানির আইপিও বাতিলের নজির গড়তে পারে তারা। তাহলে কমিশন আর অনৈতিকভাবে কোন কোম্পানির আইপিও দিতে পারে না।

প্রমাণিত অনিয়মের মধ্য দিয়ে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে এক ভিন্ন রূপ দেখায় কমিশন। এই ভিন্ন রূপে রূপান্তর করতে অবশ্য এশিয়াটিককে অনেক গচ্ছা দিতে হয়েছে বলে শোনা যায়। যা করার জন্য মাঠ প্রস্তুত করেছিলেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদ নিজে।

মনির আহমেদ যেভাবেই হোক কোম্পানিটিকে আইপিওতে টিকিয়ে রাখতে রাজি ছিলেন। যা কিছু প্রয়োজন, তাই করতে রাজি ছিলেন তিনি। এলক্ষ্যে তিনি বিএসইসির কমিশনার ও আইপিও বিভাগের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখাও করেন। তবে সৎ এই কমিশনারকে তিনি অবৈধ কাজে রাজি করাতে পারেননি। একইসময় অন্যদের সঙ্গেও মনির আহমেদ যোগাযোগ করেছিলেন। অবশ্য সেখানে সফলতাও পেয়েছেন তিনি।

এই এশিয়াটিক অস্বাভাবিক ভবন নির্মাণ ব্যয়, অবচয় কম চার্জ, অকল্পনীয় জমি উন্নয়ন ব্যয়সহ বিভিন্নভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বেশি দেখিয়ে শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৯৫ কোটি টাকা উত্তোলনের অপেক্ষায়। যে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দেশের প্রতিষ্ঠিত ও সমজাতীয় ইবনে সিনা ও একমি ল্যাবরেটরিজের মতো কোম্পানির থেকে কয়েকগুণ বেশি প্রফিট মার্জিন দেখিয়েছে। যেখানে এশিয়াটিক ল্যাব ওইসব কোম্পানির তুলনায় বাজার দখলে ধারে-কাছেও নেই।

প্রসপেক্টাসের ৫৭ পৃষ্টা অনুযায়ি, এশিয়াটিক ল্যাবের প্রাচীরসহ ২,২৪,২৬১ স্কয়ার ফিট ভবন ও কাঠামো রয়েছে। যা নির্মাণে (জমি ছাড়া) ১১২ কোটি ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৪ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে ২৬৬ পৃষ্টায় উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি স্কয়ার ফিট কাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৯৯৫ টাকা। যা কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয় বলে এখাতের সংশ্লিষ্টদের দাবি।

বিএসইসির জিজ্ঞাসায়ও বলা হয়েছে, পূণ:মূল্যায়ন ছাড়া এশিয়াটিক কর্তৃপক্ষ ২২৪২৬১ স্কয়ার ফিট ভবন ও প্রাচীরের নির্মাণ ব্যয় দেখিয়েছে ১১২,০১,৯৭,৬৬৪ টাকা। যা প্রতি স্কয়ার ফিটে প্রায় ৫০০০ টাকা পড়েছে। যা দেশের নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় খুবই বেশি।

এই বিষয়ে এক প্রকৌশলী বলেন, ভবন নির্মাণে ৫ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যত ভালো মানেরই করা হোক না কেনো, সেটা ৩০০০ টাকা অতিক্রম করতে পারে না। তবে আসল কথা হলো প্রায় সব কোম্পানিই শেয়ারবাজারে আসার আগে প্রতারণার জন্য বেশি করে দেখিয়ে থাকে।

ওই প্রকৌশলীর বক্তব্য অনুযায়ি, কমপক্ষে ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ভবন হিসাবেই সম্পদ বেশি দেখিয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। কোম্পানিটি যদি প্রতি স্কয়ার ফিটে ২০০০ টাকা করে বেশি দেখিয়ে থাকে, তাহলে (২০০০*২২৪২৬১) ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছে।

জানা গেছে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পাওয়া এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের স্থায়ী সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম খুঁজে পায় বিএসইসি। এছাড়া ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলও (এফআরসি) খুঁজে পায় নানা অপকর্ম। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে এতোটাই অনিয়ম করেছে যে, যা কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিলের জন্য যথেষ্ট ছিল। এই অবস্থায় আইপিও বাতিল ঠেকাতে অবৈধ পথে নেমেছিল এশিয়াটিক কর্তৃপক্ষ।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ২সিসি এর অধীনে ১১ নং শর্তে বলা হয়েছে, আইপিও আবেদনে যেকোন ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রদান আইপিও বাতিল হওয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। এছাড়া আবেদনের ২৫ শতাংশ অর্থ বা শেয়ার ক্ষতিপূরণন দেবে। যা বিএসইসির হিসাবে জমা করা হবে। এছাড়াও আইন দ্ধারা অন্যান্য শাস্তি প্রদান করা হতে পারে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের অসংখ্য অনিয়ম ও মিথ্যা তথ্যের কারণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ২সিসি এর অধীনে ১১ নং শর্ত অনুযায়ি আইপিও বাতিলের যোগ্য। এছাড়া সম্প্রতি বিএসইসি এমন অনিয়মের কারণে কিছু কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিলও করেছে।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের শুরুতে অসংখ্য কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করা হয়। কোনো একটি কোম্পানিকে ভুল বা অনিয়মের দায়ে শাস্তি দিয়ে আইপিও দেওয়া হয়নি। সেই কমিশন একটি দূর্বল কোম্পানিকে আর্থিক জরিমানা করে আইপিওটি চলমান রেখেছে। যা নিয়ে শেয়ারবাজারে চলছে নানা রকম রসালো আলোচনা-সমালোচনা।

রিং সাইনের ন্যায় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজেও আইপিওতে আসার আগে ছিল বিতর্কিত বড় ধরনের শেয়ার মানি ডিপোজিট। যেগুলোকে আইপিওতে আবেদনের আগে শেয়ারে রুপান্তর করা হয়েছে। যেমনটি করা হয়েছিল রিং সাইনের ক্ষেত্রে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শেয়ার মানি ডিপোজিটবাবদ অর্ধেকের বেশি টাকা জমা দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে বিক্রির টাকা বা অন্যকোন কারনে কোম্পানিতে ঢুকা অর্থকে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে দেখানো হয়েছিল। যার প্রকৃত ঘটনা এখন বেরিয়ে এসেছে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজে ৯৪ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনকে ৮০ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ারে রুপান্তরের মাধ্যমে ২০১৯ সালে ৮১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা করা হয়। এর উপরে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন করা হয়েছে ৮৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

শেয়ারনিউজ, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে