ঢাকা, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

জোটের পথে কাঁটা দুই সাবেক উপদেষ্টা—ভোটের অঙ্কে বড় হিসাব

২০২৫ ডিসেম্বর ২৭ ১১:০৩:৩০
জোটের পথে কাঁটা দুই সাবেক উপদেষ্টা—ভোটের অঙ্কে বড় হিসাব

নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জোটের প্রার্থী করতে রাজি নয় জামায়াতে ইসলামী। দলটির আশঙ্কা, তাঁদের প্রার্থী করা হলে দুই উপদেষ্টার ‘বিতর্কিত’ কর্মকাণ্ডের দায় জামায়াত-এনসিপি জোটের ওপর পড়তে পারে। একই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীরা জোটটিকে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হিসেবে চিত্রিত করে ভোটের মাঠে প্রচারণা চালাতে পারে।

জামায়াত-এনসিপির সম্ভাব্য জোট আলোচনা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, দুই সাবেক উপদেষ্টাকে বাদ দিয়ে জোটে যেতে রাজি নয় এনসিপি। মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ তাঁদের দলীয় অবস্থান ও প্রার্থিতা নিশ্চিত না হলে জামায়াতের সঙ্গে জোটে যেতে আগ্রহী নন। তাঁদের অনুসারীদের একটি অংশ সরাসরি এই জোটের বিরোধিতা করছে এবং বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহও প্রকাশ করছেন তাঁরা। তবে এনসিপিকে এক সপ্তাহ আগে চারটি আসন ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া বিএনপি বর্তমানে আলোচনায় আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

গত বুধবার এনসিপির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত প্রায় ৯০ শতাংশ সদস্য জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে লিখিত কার্যবিবরণী প্রস্তুতের পর জামায়াতের আমিরের সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্য নেতাদেরও আসন বণ্টন নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

এনসিপি সূত্র জানায়, দলের শীর্ষ ১০ নেতার মধ্যে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব নাহিদ সারোয়ার নেভাসসহ পাঁচ নেত্রী ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা চলছে। আলোচনায় তাঁদের কয়েকজনকে জোটের প্রার্থী করার কথাও রয়েছে।

দুই সাবেক উপদেষ্টায় জামায়াতের আপত্তি

আসন বণ্টন আলোচনায় যুক্ত জামায়াত নেতারা জানান, এক সাবেক উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ সত্য-মিথ্যা যাই হোক, তাঁকে জোটের প্রার্থী করলে দায় নিতে হবে জামায়াতকে। অন্যদিকে, আরেক সাবেক উপদেষ্টা দায়িত্বে থাকাকালে মওদুদীর মতবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করেছেন। তাঁকে প্রার্থী করা হলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা যাবে।

জামায়াত নেতাদের মতে, দুই সাবেক উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁদের প্রার্থী করা হলে জোটকে সরকার-ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে এবং একই সঙ্গে সরকারি শক্তির বিরোধিতার মুখে পড়ার ঝুঁকিও তৈরি হবে, যা নির্বাচনে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এনসিপির গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের শরিক এবি পার্টিও জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা চালাচ্ছে। দলটির এক নেতা জানান, জামায়াত দুই সাবেক উপদেষ্টাকে প্রার্থী করতে আগ্রহী নয়।

মাহফুজ আলম এখনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট না করলেও আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১০ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তিনি বিএনপি-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, তবে বিএনপি এতে সম্মত হয়নি। এনসিপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, আসিফ এনসিপিতে যোগ দিয়ে জামায়াত জোটের প্রার্থী হতে প্রস্তুত। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে তিনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। মাহফুজ আলমও এনসিপিতে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।

এনসিপি জোটের আরেক শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জানায়, জামায়াতের সঙ্গে জোট আলোচনার বিষয়টি তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। সংগঠনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম বলেন, “খবরটি সত্য হলে তা এনসিপি ও এবি পার্টির জোটের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।”

৩০ আসন ধরে আলোচনা, তবে বেশি প্রার্থী দিতে চায় এনসিপি

জামায়াতের কাছে এনসিপি ও এবি পার্টি মিলিয়ে ৫০টি আসন দাবি করা হয়েছে। তবে জামায়াত ৩০টি আসন নিয়ে আলোচনা করছে। জামায়াতের শর্ত হলো, নির্ধারিত আসনের বাইরে এনসিপি কোনো প্রার্থী দিতে পারবে না। কিন্তু এনসিপি চায়, ৩০ আসনের পাশাপাশি আরও ১০–২০টি আসনে শাপলা কলি প্রতীকে প্রার্থী থাকবে, যারা জামায়াতের জোট প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করবে। জামায়াত এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

জামায়াতের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “৩০০ আসনে জোটের ৩০০ প্রার্থী থাকবে। বাড়তি প্রার্থী দিলে জোটের কাঠামো ভেঙে পড়বে।”

অন্যদিকে এনসিপি নেতাদের আশঙ্কা, অতিরিক্ত প্রার্থী দিতে না পারলে দলে ভাঙন দেখা দিতে পারে। তাঁদের দাবি, চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনের তুলনায় অন্তত পাঁচটি আসন বেশি পেতে হবে এবং জোটে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে এনসিপির অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে টানাপোড়েন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনায় ইসলামী আন্দোলন শুরুতে ১৫০টি আসন দাবি করলেও পরে তা ১২০ এবং সর্বশেষ ১০০ আসনে নামিয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত প্রথমে ৫০টি আসন চাইলেও এখন দাবি করেছে অন্তত ২২টি। জামায়াত এসব দাবিতে রাজি নয়। এতে ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফতের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তবে দল দুটি জোট ছাড়ছে—এমন গুঞ্জনের সত্যতা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত।

চরমোনাই ও খেলাফতের নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, জামায়াত ১৫০ আসনে এবং এনসিপি ও অন্যান্য দল বাকি ১৫০ আসনে নির্বাচন করবে। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীক থাকবে ৭৫ আসনে।

বিএনপির মিত্রদের ঝোঁক জামায়াতের দিকে

বিএনপির কাছ থেকে আসন না পাওয়ায় লেবার পার্টিসহ কয়েকটি দল ইতোমধ্যে জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। ১২ দলীয় জোটের শরিক জাপা (জাফর) নেতা আহসান হাবিব কুষ্টিয়া-২ আসনে সমর্থন চেয়ে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

এদিকে এলডিপিকে মাত্র একটি আসন ছাড় দেওয়ায় ক্ষুব্ধ কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি সাতটি আসন দাবি করলেও জামায়াত একটির বেশি ছাড়তে রাজি হয়নি। তবে জোটের বড় নেতার মর্যাদা দিয়ে তাঁকে ‘বিশেষ সম্মান’ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে