ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

শেষ মুহূর্তে জামায়াত ও ইসলামী জোটে ভাঙনের সুর

২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ২৩:০২:৪৩
শেষ মুহূর্তে জামায়াত ও ইসলামী জোটে ভাঙনের সুর

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেষ মুহূর্তে এসে আসন সমঝোতা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতায় পড়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি ইসলামপন্থী দল। দীর্ঘদিনের আলোচনার পরও একক প্রার্থী নির্ধারণে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় পুরো প্রক্রিয়াটি এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

দফায় দফায় বৈঠক করেও সংশ্লিষ্ট লিয়াজোঁ কমিটি কোনো কার্যকর সমাধানে আসতে পারেনি। দলগুলোর ভেতরে বিশেষ করে চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন এবং মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আসন চাহিদা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হওয়ায় এই জটিলতা আরও তীব্র হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

চাহিদামতো আসন নিশ্চিত না হলে সমঝোতার বাইরে গিয়ে আলাদা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের আভাস দিয়েছে এই দুই দল। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, এ ধরনের সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো একটি প্রভাবশালী মহলের আশ্বাস বা ইঙ্গিত থাকতে পারে।

এই জটিলতার মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে এনসিপি। জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিতে দলটি অন্তত অর্ধশত আসনের প্রত্যাশা করছে। এনসিপি যুক্ত হলে অন্য দলগুলোকেও অতিরিক্ত ছাড় দিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি আরও কয়েকটি দল আসন সমঝোতার বিষয়ে যোগাযোগ করছে, যা পুরো প্রক্রিয়ায় নতুন মেরুকরণ তৈরি করেছে।

সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে অংশ নিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। তাদের লক্ষ্য ছিল ইসলামপন্থী দলগুলোর ভোট একত্রিত করে সরকার গঠনের পথে এগোনো।

তবে শেষ সময়ে এসে আসন বণ্টনের জটিলতায় সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাবি পূরণ করতে গিয়ে জামায়াতকে বড় চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। অন্য দলগুলোর দাবি মানলে জামায়াতের নিজের জন্য নির্ধারিত আসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে।

অন্যদিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেলে কয়েকটি দল সমঝোতা প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে বিকল্প সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও ভাবছে। তবুও জামায়াতসহ সব দল এখনো সমঝোতার ভিত্তিতেই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে অন্য দলগুলোর বক্তব্য—এই ক্ষেত্রে জামায়াতকেই বেশি ছাড় দিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবারের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সমাধান বের করার চেষ্টা চলছে। ওই সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না হলে মনোনয়ন ফরম প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

যদিও এই অনিশ্চয়তার মধ্যেও আশাবাদী বক্তব্য দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আট দলের সমন্বয়ক ড. হামিদুর রহমান আযাদ। তাঁর ভাষায়, জামায়াতের কাছে কোনো আসন নেই, আসন সবার। সবাই ছাড় দেবে, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচনে যাবে।

সূত্র অনুযায়ী, ইসলামী আন্দোলন জাতীয় নির্বাচনে অন্তত ১০০ আসন দাবি করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাবি ২৫ থেকে ৩০ আসন। খেলাফত মজলিসের অপর অংশও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন প্রত্যাশা করছে। এসব দাবি পূরণ করতে গেলে জামায়াতের আসন সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাবে, অথচ জামায়াত নিজে অন্তত ২০০ আসনে নির্বাচন করতে চায়।

এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, একটি বিশেষ মহল ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে আলাদা জোট গঠনের পরামর্শ দিতে পারে। এমনকি অতীতে বিতর্কিত নির্বাচনের মতো কিছু নির্দিষ্ট আসনে জয়ের আশ্বাস দেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে, যা জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ হতে পারে।

এমন আভাস দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের এক সহকারী মহাসচিব জানান, তারা ১২০টি আসনে সমঝোতা চেয়েছেন, যার মধ্যে শতাধিক আসন তাদের জন্য অপরিহার্য। এনসিপি যুক্ত হলে কিছুটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে ২০টি, খেলাফত মজলিসকে ১৫টি, খেলাফত আন্দোলনকে ৪–৫টি, নেজামে ইসলাম পার্টিকে ২–৩টি, জাগপাকে একটি এবং বিডিপিকে দুটি আসন দিলে জামায়াত ১৫০ আসনে নির্বাচন করলেও সমস্যা হবে না। তবে জামায়াত যদি ১৮০–১৯০ আসনে অনড় থাকে, তাহলে হিসাব ভিন্ন দিকে যেতে পারে।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ অবশ্য জানিয়েছেন, আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা এখনো চলমান। এনসিপিসহ নতুন কয়েকটি দলের আগ্রহের কারণে আলোচনা কিছুটা দীর্ঘ হচ্ছে।

কাঙ্ক্ষিত আসন পাচ্ছেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু এখনো কোনো জোট চূড়ান্ত হয়নি, তাই পাওয়া-না পাওয়ার প্রশ্নও আসে না। কারো কাছে চাওয়ার বিষয়ও নেই। কোন দল কোথায় গেলে ভালো হয়, সেটি নিয়েই আলোচনা চলছে।

বিএনপি বা অন্য কোনো পক্ষ থেকে চাপ আছে কিনা—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, কয়েকদিন আগে বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা জানিয়েছে, দরজা খোলা আছে। তবে আগের দেওয়া ঘোষণা বাস্তবায়নের দায়বদ্ধতা থেকেই তারা এখনো সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এক শীর্ষ নেতা জানান, তারা ঐক্য ধরে রাখতে চান, তবে তা অবশ্যই দলের সম্মান ও মর্যাদা বজায় রেখে। সম্মানজনক আসন না পেলে বিকল্প চিন্তা করতেই হবে বলে তিনি স্পষ্ট করেন।

সূত্রমতে, দলটির কাঙ্ক্ষিত আসনের প্রায় ৬০ শতাংশ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সমাধান হয়েছে। ৮০ শতাংশ পূরণ হলে সেটিকে সম্মানজনক বলে মনে করা হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, সব দলের চাওয়া-পাওয়ার সমন্বয় করতে সময় লাগছে। সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাধানের লক্ষ্যে দুই-একদিনের মধ্যে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হবে।

শেষ পর্যন্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ২৭ তারিখ পর্যন্ত আলোচনার সুযোগ রয়েছে। কিছু আসনে সমঝোতা হয়েছে, বাকিগুলো মনোনয়ন জমার পরও হতে পারে। সবাই যেমন কাঙ্ক্ষিত আসন চায়, তেমনি ঐক্যও ধরে রাখতে চায়। তাই এই ঐক্য ভাঙার আশঙ্কা তিনি দেখছেন না; বরং শেষ মুহূর্তে আরও বড় পরিসরে ঐক্য গড়ে উঠতে পারে।

সিরাজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে