ঢাকা, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বায়ুদূষণে তৃতীয় ঢাকার বাতাস আজ বিপজ্জনক

২০২৫ ডিসেম্বর ২২ ১০:২০:০০
বায়ুদূষণে তৃতীয় ঢাকার বাতাস আজ বিপজ্জনক

নিজস্ব প্রতিবেদক: শীতের শুরুতেই ঢাকার বাতাসে অস্বস্তি বাড়ছে। শুষ্ক আবহাওয়া, ধুলাবালির আধিক্য এবং নিয়ন্ত্রণহীন দূষণের কারণে রাজধানীতে আজ সোমবার বায়ুমান নেমে এসেছে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ার–এর সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, আজ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি।

আইকিউএয়ারের সোমবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের পরিমাপ অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুমান সূচক (একিউআই) স্কোর দাঁড়িয়েছে ২৩২, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বাতাসের স্পষ্ট নির্দেশক। একই সময়ে দিল্লির বায়ুমান সূচক ছিল ২৭৪, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

দূষণের তালিকায় শীর্ষ পাঁচ শহরের মধ্যে অন্যগুলো হলো—মিশরের কায়রো (২৩৫), ভারতের কলকাতা (২১০) এবং ভিয়েতনামের হ্যানয় (১৯১)।

রাজধানীর যেসব এলাকায় আজ বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—গোড়ান, দক্ষিণ পল্লবী, ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর এলাকা, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল সংলগ্ন এলাকা, শান্তা ফোরাম, পেয়ারাবাগ রেললাইন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবন এলাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাতাসের মান খারাপ হওয়ার প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম ধূলিকণা। এসব কণার আকার অত্যন্ত ছোট হওয়ায় এগুলো সহজেই ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসসহ শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার স্থবিরতা, পুরোনো ও ধোঁয়া নির্গতকারী যানবাহন, শিল্পকারখানার অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে উড়তে থাকা ধুলা এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বাতাসকে ভালো ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ হলে সংবেদনশীল মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। সূচক ৩০০ ছাড়ালে তা দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল–এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে।

এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে প্রতি বছর প্রায় ৬৭ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক–এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই বায়ুদূষণের কারণে বছরে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত থাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় নাগরিকদের বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসকষ্ট বা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মালিকদের কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া এবং নির্মাণ এলাকার আশপাশে দিনে অন্তত দুইবার পানি ছিটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ধোঁয়া নির্গত করে এমন পুরোনো যানবাহন রাস্তায় নামানো থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

বিপজ্জনক এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মানুষদের ঘরের বাইরে না যাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। সুস্থ ব্যক্তিদেরও বাইরে থাকার সময় সীমিত রাখা এবং ভারী শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলা উচিত। প্রয়োজন হলে বাইরে গেলে কার্যকর মানের মাস্ক ব্যবহার এবং ঘরের ভেতরে বাতাস পরিষ্কার রাখতে বাতাস পরিশোধক যন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে