ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

মাযহাব সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর 

২০২৫ নভেম্বর ২৭ ১০:২৭:০৮
মাযহাব সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর 
মাযহাব সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর 

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইসলামি শরিয়তের বিধান পালন করতে গিয়ে সাধারণ মুসলিমদের মনে প্রায়ই মাযহাব, সুফিবাদ এবং বিদআত নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন তৈরি হয়। সম্প্রতি ‘টুয়ার্ডস ইটারনিটি’র বাংলা চ্যানেলে প্রচারিত এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. শাদি এলমাসরি এসব বিষয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেন। তাঁর সেই আলোচনার সারসংক্ষেপ নিয়ে এই বিশেষ প্রতিবেদন।

অনেকের ধারণা—মাযহাব হলো কোনো পুরোনো যুগের আলেমের ব্যক্তিগত মতামত। কিন্তু ড. শাদি এলমাসরি বলেন, মাযহাব মূলত একটি পদ্ধতি (School of Jurisprudence)—যা মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে শরিয়ত মানা সহজ করে।

কুরআন–সুন্নাহর বহু নির্দেশ এমন আছে যার একাধিক যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা সম্ভব (যাকে বলা হয় জন্নিয়্যাতুদ দালালাহ)। এখান থেকেই মাযহাবের উৎপত্তি।

ড. শাদি উদাহরণ দেন—খন্দকের যুদ্ধের পর বনু কুরাইজা গোত্রের দিকে রওনা হওয়ার সময় নবী করিম (সা.) নির্দেশ দিয়েছিলেন: “বনু কুরাইজায় না পৌঁছে কেউ আসরের নামাজ পড়বে না।”

সাহাবীদের একদল আক্ষরিক অর্থ ধরলেন—সূর্যাস্তের পরও নামাজ পড়লেন না। অন্য দল বুঝলেন যে উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত যেতে বলা— তাই পথেই নামাজ পড়লেন। রাসুল (সা.) দুই-ই সঠিক বলে অনুমোদন দেন।

এ থেকেই বোঝা যায়—ইসলামের অনেক নির্দেশের একাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে। প্রতিটি মাযহাবই কুরআন–সুন্নাহভিত্তিক, বহু যুগের আলেমদের গবেষণা–মন্তব্যের সম্মিলিত ফল।

ড. শাদির মতে—হাম্বলি, আশআরি বা মাতুরিদি কোনো পৃথক ধর্ম নয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে দার্শনিক চিন্তা, নাস্তিকতা ও বিদ্বেষমূলক মতবাদ মুসলমানদের বিশ্বাসে আঘাত হানতে শুরু করলে যুক্তি–তর্কের মাধ্যমে ইসলামকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ইলমুল কালাম বিকশিত হয়।

আশআরি ও মাতুরিদি আকিদা মূলত ইসলামি বিশ্বাসকে যৌক্তিকভাবে প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি।ইমাম নববীর মতে—এটি ওলামাদের জন্য ফরজে কিফায়া।

সুফিবাদ সম্পর্কেও সমাজে বহু ভুল ধারণা রয়েছে। ড. এলমাসরি বলেন— সুফিবাদ = ইহসান + তাজকিয়াতুন নফস (আত্মশুদ্ধি).

ইসলামে যেমন ফিকহ (আইন) ও আকিদা (বিশ্বাস) জরুরি, তেমনি অন্তরের পরিশুদ্ধিও অপরিহার্য।

একজন প্রকৃত সুফি তিনি—যিনি সঠিক আকিদা ও শরিয়ত মেনে চলেন,নফসকে পরিশুদ্ধ করেন,জিকির–ইবাদত ও নৈতিক আচরণের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন,শরিয়তবিরোধী কোনো কাজ কখনই সুফিবাদ নয়।

বিদআত প্রসঙ্গে ড. শাদি শাফেয়ী ও মালেকি মাযহাবের উদ্ধৃতি দেন—ইসলামে নতুন সব বিষয়ই হারাম নয়।কোনো কাজ শরিয়তের মানদণ্ডে বিচার করতে হয়—ওয়াজিব,মুস্তাহাব,মুবাহ,হারাম, কোন শ্রেণিতে পড়ে।

সম্মিলিত জিকির বা মিলাদ সম্পর্কে তিনি বলেন—সাহাবীরাও সম্মিলিতভাবে আল্লাহকে স্মরণ করতেন।

চার মাযহাবেই উচ্চস্বরে জিকির বা সম্মিলিত তিলাওয়াত বৈধ।তবে ইমাম মালিক (রহ.) মনে করতেন—এগুলোকে যেন মানুষ ফরজ হিসেবে না ধরে তাই জনসমক্ষে অতিরিক্ত জাঁকজমক পরিহার করা ভালো।

বর্তমান যুগে মানুষ যখন দ্বীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তখন শরিয়তবিরোধী কিছু না থাকলে মানুষকে দ্বীনের দিকে আহ্বান করতে এমন আয়োজন উপকারী হতে পারে।

ড. শাদি এলমাসরি বলেন—আজকের যুগ বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের যুগ।নাস্তিকতা, উদারবাদ, নৈতিক অবক্ষয়—এগুলোই বড় চ্যালেঞ্জ। ছোটখাটো মতভেদ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করা শয়তানের প্ররোচনা ছাড়া আর কিছু নয়।

তিনি জোর দিয়ে বলেন—ব্যক্তিগত ও মাযহাবগত মতভেদ ভুলে, সত্য জ্ঞান অর্জন করে, উম্মাহর ঐক্যের জন্য কাজ করা জরুরি

আল্লাহ বলেন—“তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন।”

ড. শাদি এলমাসরির আলোচনায় স্পষ্ট যে—ইসলাম কোনো কঠিন বা জটিল ধর্ম নয়।মাযহাব, সুফিবাদ ও আকিদাগত ভিন্নতা আসলে ইসলামের বিস্তৃততা, নমনীয়তা এবং জ্ঞানের গভীরতার প্রমাণ।

বর্তমান সময়ে প্রয়োজন—সঠিক জ্ঞান অর্জন, নিরর্থক বিতর্ক এড়িয়ে চলা, ঈমান ও আমলকে শক্তিশালী করা এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের পক্ষে কাজ করা।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে