ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

১৫০০ কোটি টাকার জরুরি ঋণ পেল এবি ব্যাংক

২০২৫ নভেম্বর ২৫ ২১:০৫:৪৯
১৫০০ কোটি টাকার জরুরি ঋণ পেল এবি ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমানতকারীদের টাকা তোলা ও বড় কর্পোরেট দেনা মেটানোর ক্ষেত্রে তীব্র সংকটে পড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংককে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক নীরবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার জরুরি ঋণ সহায়তা দিয়েছে। দেশের প্রথম বেসরকারি এই বাণিজ্যিক ব্যাংকটির তারল্য সংকট এতটাই গুরুতর যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এমন বড় ধরনের 'লাইফলাইন' দিতে হলো। ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর কর্তৃক এই ৯০ দিনের তারল্য সহায়তা অনুমোদিত হয়, যার সুদের হার নির্ধারিত হয়েছে ১১.৫০ শতাংশ। একই দিন ব্যাংকটি তাদের প্রমিসরি নোট জমা দেওয়ার পরপরই টাকাটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে এবি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

এই নতুন বিপুল অঙ্কের ঋণ সহায়তার ফলে এবি ব্যাংকের মোট ঋণের বোঝা আরও বেড়েছে। এর আগে ব্যাংকটি তিন ধাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৭৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এরফলে, বর্তমানে ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ রেকর্ড অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাস থেকে গ্রাহকরা ব্যাংকটি থেকে ৮৪২ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার ফলে আমানতে তীব্র টান পড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে এবি ব্যাংকের ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্টে মাত্র ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা রয়েছে, যা এতটাই কম যে শাখাগুলো প্রায়শই গ্রাহকদের টাকা তোলার অনুরোধ রাখতে পারছে না।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান গভর্নরকে লেখা এক চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সতর্ক করে দেন, তারল্যের এই তীব্র ঘাটতি 'আমানতকারী ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক' সৃষ্টি করেছে এবং শাখাগুলোতে 'তীব্র অশান্তির' ঝুঁকি তৈরি করছে। সংকট সামাল দিতে গত নভেম্বর ৩ তারিখে গভর্নর-এর সঙ্গে এক বৈঠকে এবি ব্যাংক প্রথম দফায় ৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল তহবিল চেয়েছিল। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ জরুরি তারল্য সহায়তার জন্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা চেয়ে একটি অনুরোধ অনুমোদন করে, যার পরই চেয়ারম্যান কায়সার এ চৌধুরী এবং এমডি সৈয়দ মিজানুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে গভর্নরের কাছে আবেদন করেন।

ব্যাংকের বোর্ডের রেকর্ড অনুসারে, এই সংকটের কারণে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আটকা পড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ২০২ কোটি টাকা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ৩৭৮ কোটি টাকা, আশা বাংলাদেশের ১ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা এবং আরও বিভিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ। এমনকি ব্যাংকটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ৫২৮ কোটি টাকার একটি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিষ্পত্তি করতেও ব্যর্থ হয়েছে।

একসময় পরিষেবা এবং গ্রাহক অর্জনের জন্য প্রশংসিত এবি ব্যাংক বছরের পর বছর ধরে শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতি, দায়িত্বজ্ঞানহীন অভ্যন্তরীণ ঋণ বিতরণ এবং স্পন্সর-পরিচালকদের 'শিকারমূলক' কার্যকলাপের শিকার হয়েছে। ব্যাংকটির আর্থিক চিত্র এখন খুবই করুণ। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে তাদের অ-পারফর্মিং বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৩০,১৪৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশই কেন্দ্রীভূত রয়েছে তাদের শীর্ষ ২০ জন ঋণগ্রহীতার কাছে। দীর্ঘদিনের লুটপাটের ফলে ব্যাংকটি ২০২৪ সালে রেকর্ড লোকসান করেছে: শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২১ টাকা ২৮ পয়সা এবং সমন্বিত বার্ষিক লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের ৯০ কোটি টাকা মুনাফা থেকে এক বিশাল বিপর্যয়।

তহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে