ঢাকা, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’ বলে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না ভারত

২০২৫ নভেম্বর ২৬ ১১:০১:৩৪
‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’ বলে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে নোট ভারবাল (আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক বার্তা) পাঠিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাঁচ দিন পর এ অনুরোধ পাঠানো হয়। অভিযোগ ছিল, গত বছরের জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থী আন্দোলন দমনে নির্দেশনা দিয়ে তারা প্রায় ১,৪০০ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।

রায়ের পর থেকেই ঢাকার এই পদক্ষেপ প্রত্যাশিত ছিল। রায় ঘোষণার পর অন্তর্বর্তী সরকার দিল্লিকে দুটি ব্যক্তিকে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়া ভারতের ‘বাধ্যতামূলক দায়িত্ব’। মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়া হলে তা ‘অমিত্রসুলভ আচরণ’ ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করে মন্ত্রণালয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকেই বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার দিয়ে আসছেন।

গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার তাকে ফেরত চাইলেও ভারত আগের অনুরোধগুলোতে কার্যত সাড়া দেয়নি। প্রথম নোট ভারবালের (ডিসেম্বর ২০২৪) জবাবে ভারত কেবল বার্তা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। দ্বিতীয় নোট ভারবালেরও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো জানায়নি। আইসিটির রায়ের পরও দিল্লি কেবল বলেছিল, তারা ‘রায়টি লক্ষ্য করেছে’ এবং বাংলাদেশের শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার পক্ষে থাকবে—কিন্তু প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়।

ভারতের গবেষক স্মৃতি এস. পট্টনায়ক মনে করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ‘অস্থায়ী ও সীমিত ম্যান্ডেট’ নিয়ে সরকার চলছে। ফলে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে দিল্লি কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেবে না।

ভারতে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিরোধিতা প্রবল। মুক্তিযুদ্ধের সহযোগিতা, ১৯৭৫ সালের পর ভারতে আশ্রয়, এবং দীর্ঘ শাসনামলে ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা—এসব কারণে দিল্লি তাকে দীর্ঘদিন ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’ হিসেবে দেখে। ফলে একজন বন্ধুত্বপূর্ণ নেতাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি পাঠানো ভারতের জন্য রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল।

২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকা সত্ত্বেও ভারত চাইলে ‘রাজনৈতিক চরিত্রের অপরাধ’ ধারায় প্রত্যর্পণে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। যদিও খুন-হত্যার মতো অভিযোগ এই ধারায় পড়ে না, তবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ততা প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে। দিল্লি বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা কিংবা ট্রাইব্যুনালের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে।

এমনকি ভারত প্রত্যর্পণে সম্মত হলেও, সেক্ষেত্রে ভারতের আদালতে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে, যেখানে শেখ হাসিনাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশে ভারতের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত ভারত সতর্ক অবস্থান ধরে রাখবে। এর মধ্যে দিল্লিকে “ধীরে ও নীরবে” সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে—কারণ নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে ভারতবিরোধী বক্তব্য সহজেই রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও চাপের মুখে ফেলতে পারে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে