ঢাকা, শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

আ. লীগের গোপন গেরিলা প্রশিক্ষণের আস্তানা প্রকাশ্যে

২০২৫ আগস্ট ০১ ১১:৪০:২১
আ. লীগের গোপন গেরিলা প্রশিক্ষণের আস্তানা প্রকাশ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশ এবং দেশের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মী রীতিমতো গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই প্রশিক্ষণ হয়েছে দিল্লি, কলকাতা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা এবং গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

প্রশিক্ষণ নেওয়া কর্মীদের প্রধান উদ্দেশ্য দেশের মধ্যে বড় ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর রাজধানী ঢাকাকে দখল নেওয়া। এজন্য মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসাবে তালিকাভুক্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কোর গ্রুপের একটি বড় অংশ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে।

সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এ চক্রের কয়েকজন সদস্যের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, অবাক হওয়ার বিষয় হলো— যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের একটি অংশ হলো অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীরাও প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

প্রশিক্ষণ হয়েছে দিল্লি, কলকাতা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা এবং গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। চূড়ান্ত সফলতা অর্জনের আগ পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এরই অংশ হিসাবে ৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ওই প্রশিক্ষণ চলাকালে কনভেনশন সেন্টারে সরকারবিরোধী নানা স্লোগানও দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণের তথ্য পেয়ে ১৩ জুলাই রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন ইউনিট। ওই অভিযানে গ্রেফতার করা হয় দুজনকে—সোহেল রানা (৪৮) ও শামীমা নাসরিন শম্পা (৪৬)-কে।

সোহেল রানার বাবার নাম আব্দুস সোবহান গোলন্দাজ। তিনি বরগুনার তালতলী থানার মৌপাড়া গ্রামের। তার বাসা রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডে। শম্পার স্বামী আহাদুজ্জামান একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। শম্পার বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বড়াশুর গ্রামে এবং বাবার বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার বাজরা গ্রামে।

গ্রেফতারকৃতরা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে—জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারা এ বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে, যা যাচাই করা হচ্ছে।

তারা জানিয়েছে, ঢাকা দখল করাই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশ থেকে তালিকাভুক্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী একযোগে ঢাকায় এসে সমবেত হবেন শাহবাগ এলাকায়। সেখানে শাহবাগ মোড় দখল করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে জানানো হবে যে—আওয়ামী লীগের কয়েক লাখ লোক রাজধানী দখল করেছে এবং প্রশাসন তাদের সঙ্গে রয়েছে। এর প্রভাব সারা দেশে পড়বে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, আওয়ামী অধ্যুষিত কয়েকটি জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন মাঠে নামার সাহস দেখাবে। বড় ধরনের সংঘাত ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরির জন্য সব প্রস্তুতি আগেই নেওয়া হবে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরিস্থিতি বুঝে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) কামরুল হাসান বলেন,“এটি একটি অনেক বড় কর্মযজ্ঞ। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।” তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় শুধু ডিবি নয়, আরও কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে।

অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। তবে সরকারের কাছে বিষয়টি পৌঁছানোর পর তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। মূলত, পুরো বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশ্বস্ত টিম দিয়ে মোকাবিলা করা হচ্ছে এবং কেউ পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য পুরো চক্রকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে