ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

ইসলামী ব্যাংক: দখল, পতন ও নতুন লড়াইয়ের গল্প

২০২৫ জুলাই ২২ ২২:৩১:৩২
ইসলামী ব্যাংক: দখল, পতন ও নতুন লড়াইয়ের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ১৯৮৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি একসময় সততা ও দক্ষতার কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং আমানত ও বিনিয়োগে শীর্ষস্থানে পৌঁছায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহু পুরস্কারও জেতে ব্যাংকটি।

তবে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের হস্তক্ষেপে ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এর ফলে ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্য ও সুশাসনে ব্যাপক অবনতি ঘটে। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭৮ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর লুটেরা গোষ্ঠী পালিয়ে গেলেও ইসলামী ব্যাংক এখনো এর পূর্বের মালিকদের হাতে ফেরেনি। বরং ১১ আগস্ট ব্যাংকটিতে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে, যেখানে পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন। এ ঘটনার পেছনে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের শীর্ষ নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়।

২০২৪ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পাঁচ সদস্যের নতুন পর্ষদ গঠন করে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, যিনি এর আগে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নানা অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে এস আলমের সঙ্গে যোগাযোগ ও লবিংয়ের অভিযোগ ওঠার পর গত ১৭ জুলাই তিনি পদত্যাগ করেন। ফলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ শূন্য হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক ড. জোবায়েদুর রহমানকে চেয়ারম্যান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং পরিচালনায় এবং বিশেষত শরিয়াহ ব্যাংকিংয়ে ড. জোবায়েদুর রহমানের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

শেয়ারহোল্ডাররা মনে করছেন, তাকে চেয়ারম্যান করা হলে ব্যাংকের আরও ক্ষতি হবে এবং তারা প্রতিষ্ঠাকালীন মালিকদের কাছে ইসলামী ব্যাংক ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। গত ৯ জুলাই শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকরা ড. জোবায়েদুর রহমানকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন, যেখানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং ব্যাংকের ইসলামী চরিত্র ধ্বংসের চক্রান্তের অভিযোগ আনা হয়।

অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, মালিকানা বদলের পর ব্যাংকটির আর্থিক সূচকগুলোতে অবনতি হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আর্থিক সুস্বাস্থ্য, সুশাসন ও অন্যান্য দিক দিয়ে এক সময়ের সেরা একটি ব্যাংক সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে চলে গেছে মালিকানা বদলের পরে। কাজেই ব্যাংকটিতে অবশ্যই অভিজ্ঞ ও যোগ্য লোককে বসাতে হবে।" তিনি আরও যোগ করেন যে, "আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা উচিত।"

ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান এক ওয়েবিনারে জানান, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ডিজিএফআই কর্মকর্তারা তাকে ও ব্যাংকটির চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানকে জোর করে তুলে নিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের দখলে দেয়। তিনি এই অনৈতিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু ইসলামী ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সুযোগ এসেছে। তাই এটিকে অবশ্যই অভিজ্ঞ ও যোগ্য কারো হাতে তুলে দিতে হবে এবং শেয়ারহোল্ডারদের দাবির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে