ঢাকা, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
Sharenews24

জেলখানায় আ.লীগ নেতার 'গোপন পরিকল্পনা' ফাঁস

২০২৫ জুন ০৬ ১০:১১:২২
জেলখানায় আ.লীগ নেতার 'গোপন পরিকল্পনা' ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু—এমন বিস্ফোরক অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে কারা প্রশাসনে। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে বসেও তিনি দলীয় ও অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

কারা সূত্র জানায়, কারাগারে বসেই সাইদুল করিম মিন্টু নিয়মিতভাবে জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। পাশাপাশি অপরাধ জগতের একাধিক চিহ্নিত ব্যক্তির সাথেও তাঁর যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। এই মোবাইল ফোন ব্যবহারে কারা কর্মীদের সহায়তা পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, যার পেছনে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের কথাও জানা গেছে।

স্থানীয় পর্যায়ে অনেকেই জানতেন তিনি মোবাইল ব্যবহার করছেন, তবে কেউ তা প্রকাশ্যে আনেননি। বিষয়টি সম্প্রতি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ গোপনে তাকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করেছে।

ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের জেল সুপার আবু ইউসুফ বলেন, “আমি যোগদানের আগেই মিন্টু মোবাইল ব্যবহার করেছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কারা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে বন্দি অবস্থায় একজন কীভাবে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন—এই প্রশ্নে তিনি নিরুত্তর।

উল্লেখ্য, সাইদুল করিম মিন্টু ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাবন্দি। ২০২৪ সালের ১১ জুন রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে উঠে আসে, ভারতে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে সাবেক এমপি আনারকে হত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়।

২০১১ সালে ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়া মিন্টু টানা ১১ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৫ ও ২০২২ সালে দুই দফা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সময়ের পর সময় উঠেছে হত্যা, চাঁদাবাজি, সোনা চোরাচালান, জমি দখলসহ অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে বাগানবাড়ি নির্মাণ, শহরের জমিতে বিপণিবিতান গড়ে তোলা এবং ঢাকাসহ বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এসব নিয়ে একাধিকবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করলেও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে।

দলীয় সূত্র বলছে, মিন্টু আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী অংশের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তবে সম্প্রতি পরিস্থিতির বদলে যাওয়ায় তাঁর প্রতি দলীয় অবস্থান নিয়েও এখন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।

সাইদুল করিম মিন্টুর বিরুদ্ধে ২০১৩-২০২২ সালের মধ্যে সংঘটিত একাধিক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

২০১৪: শ্রমিক নেতা আব্দুল গফফার বিশ্বাস হত্যা

২০১৫: মডার্ন মোড়ে তরিকুল ইসলাম হত্যা

২০২১: খাজুরায় আবন হত্যা

২০২২: সরকারি কলেজছাত্র ভিপি মুরাদসহ দুই শিক্ষার্থীকে হত্যা

এছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ের জমি দখল করে বিপণিবিতান নির্মাণ ও আমোদ-প্রমোদের জন্য ‘বাগানবাড়ি’ তৈরি নিয়েও রয়েছে বিস্তর আলোচনা।

কারাগারে মোবাইল ব্যবহারের ঘটনা শুধু একজন রাজনীতিকের ব্যক্তিগত অনিয়ম নয়, এটি গোটা কারা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রশাসন এবং রাজনৈতিক মহল—উভয়ের জন্যই এটি এক কঠিন বার্তা।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে