ঢাকা, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
Sharenews24

ব্যাংকিং খাতে সুদের ব্যবধান বেড়ে দ্বিগুণ, ঝুঁকিতে অর্থনীতি ও উদ্যোক্তা

২০২৫ মে ২৬ ০৬:১২:০৪
ব্যাংকিং খাতে সুদের ব্যবধান বেড়ে দ্বিগুণ, ঝুঁকিতে অর্থনীতি ও উদ্যোক্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দহার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্তের পর থেকে দেশের ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান—স্প্রেড—দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের মার্চে যেখানে গড় স্প্রেড ছিল ২.৯৬ শতাংশ, ২০২৫ সালের মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ৫.৮৭ শতাংশে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি ৪ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা দিলেও অনেক ব্যাংক তা মানছে না।

বিশেষ করে বিদেশি ও কিছু বেসরকারি ব্যাংক স্প্রেড বাড়িয়ে মুনাফা অর্জনে এগিয়ে রয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ৯.৬৯ শতাংশ এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৯.৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে। এসব ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ১ থেকে ২ শতাংশের কম সুদ দিলেও ঋণের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ বা তার বেশি সুদ নিচ্ছে। ফলে তাদের মুনাফা রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে।

এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে দুর্বল ও অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে। এসব ব্যাংক ১২-১৪ শতাংশ সুদ দিয়ে আমানত টানার চেষ্টা করলেও গ্রাহকদের আস্থা হারিয়ে ফেলছে। গ্রাহকরা তুলনামূলক নিরাপদ ব্যাংকে কম সুদে আমানত রাখতে বেশি আগ্রহী। ফলে দুর্বল ব্যাংকগুলো লোকসানের মুখে পড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্প্রেড ৪ শতাংশের বেশি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে অনেক ব্যাংক নির্দেশনা উপেক্ষা করছে। ফলে বাজারে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে, যা ভালো উদ্যোক্তাদের ঋণগ্রহণে বাধা তৈরি করছে এবং অনেককে খেলাপিতে পরিণত করছে।

অপরদিকে, ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের বড় অংশই এখন অনুৎপাদনশীল ও খেলাপি হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২০ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত খেলাপি আরও বেশি, ৩০ শতাংশের কাছাকাছি।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন জানিয়েছেন, এখন ১৪ শতাংশ সুদেও ঋণ পাওয়া কঠিন। পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটও সমস্যা আরও জটিল করে তুলেছে।

চলমান পরিস্থিতিতে সুনামধন্য ব্যাংকগুলো লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ আমানতকারী, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, বাজারে ভারসাম্য ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর ও কার্যকর নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় আর্থিক খাতে এই বৈষম্য দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বড় ঝুঁকিতে ফেলবে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে