ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি নিয়ে আইএমএফের নতুন সিদ্ধান্ত

২০২৫ এপ্রিল ১৮ ১১:৫১:০২
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি নিয়ে আইএমএফের নতুন সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম সঠিক পথে রয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায়নি সংস্থাটি। আইএমএফ জানিয়েছে, বাকি দুই কিস্তির অর্থ আগামী জুনে ছাড় হতে পারে, তবে এর আগে আলোচনা ও চুক্তির কিছু ধাপ এখনও বাকি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান আইএমএফ প্রতিনিধি দল। তারা গত ৬ এপ্রিল থেকে দুই সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতি ও সংস্কার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।

পাপাজর্জিও বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়ে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। আগামী ২১-২৬ এপ্রিল ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভাতে বিষয়টি নিয়ে গভীর আলোচনা হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমানসহ একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এতে অংশ নেবে।

তিনি আরও বলেন, “এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশ ও এর জনগণের পাশে থাকার জন্য আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।”

আইএমএফের মতে, বাংলাদেশের রাজস্ব সংগ্রহ, বিনিময়হার নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাত সংস্কার ও বাজারভিত্তিক নীতির কিছু বিষয়ের ওপর এখনও আলোচনা বাকি রয়েছে। বিশেষ করে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা, ডলার বিনিময় হার, এবং বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় কর নীতিতে সংস্কার নিয়ে সংস্থাটির সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কিছুটা সময় নিচ্ছে।

তবে তারা এটাও জানিয়েছে, বাংলাদেশে রিজার্ভ পরিস্থিতি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো, এবং বিনিময় হার এখন বেশ স্থিতিশীল। এসব কারণে সংস্থাটি মনে করছে, শর্ত পূরণ ও আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে কোনো বড় বাধা থাকবে না।

ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, “বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য আর্থিক খাত সংস্কার, স্বচ্ছতা এবং সুশাসন অপরিহার্য। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ ও ব্যাংক খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা, আইনি কাঠামোর সংস্কার এবং মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে (AML/CFT) কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।"

উল্লেখ্য, আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তি হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তিন কিস্তিতে পেয়েছে মোট ২৩১ কোটি ডলার।

প্রথম কিস্তি: ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার

দ্বিতীয় কিস্তি: ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার

তৃতীয় কিস্তি: ২০২৪ সালের জুনে, ১১৫ কোটি ডলার

এই তিন কিস্তি শেষে বর্তমানে বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার, যার মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সরকার আশা করছে, আগামী জুনে এই দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় হবে।

আইএমএফ মনে করছে বাংলাদেশের বিনিময়হার আরও নমনীয় ও বাজারভিত্তিক করা দরকার। যদিও সংস্থাটি এখনই পুরোপুরি বাজারে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী নয়, তবে তারা মনে করছে, বর্তমানে এটি করার জন্য যথাযথ সময় চলছে, কারণ ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামে ব্যবধান কম এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ছে।

পাপাজর্জিও বলেন, “বাংলাদেশের জন্য আগামীদিনগুলোতে বড় চ্যালেঞ্জ হবে আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তা, মূল্যস্ফীতির চাপ এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। এসব মোকাবিলায় আর্থিক খাত সংস্কার, ব্যাংক পুনর্গঠন এবং ছোট আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে।”

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে