ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

গত ছয় মাস ধরে ভারতের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন

২০২৫ মার্চ ০৭ ১২:০২:০৭
গত ছয় মাস ধরে ভারতের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারতের শেয়ারবাজারে ট্রিলিয়ন ডলারের ধস এবং লাখো মধ্যবিত্তের মাথায় হাতের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনটি। এর মধ্যে কিছু মূল পয়েন্ট তুলে ধরা হল:১. ভারতের শেয়ারবাজারের পতন:

গত ছয় মাস ধরে ভারতের শেয়ারবাজারে একটি ধারাবাহিক পতন চলছে। এর ফলে অনেক বিনিয়োগকারী হাজার হাজার কোটি রুপি হারিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ৯০০ বিলিয়ন ডলার মূলধন কমেছে।

পতনের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ, যেমন: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া, অতিমূল্যায়িত শেয়ার, এবং দুর্বল মুনাফা।

২. বিনিয়োগকারীদের উপর প্রভাব:

রাজেশ কুমার নামের এক প্রকৌশলী, যিনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, এখন তার সমস্ত সঞ্চয় বাজারে লেগে গেছে এবং তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। তার ছেলের মেডিকেল কলেজের ফি দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন এবং লোকসান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে হবে।

তেমনি, তরুণ সরকার নামে এক সাবেক বিপণন ব্যবস্থাপকও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু এখন তিনি আশঙ্কিত। তার কথায়, ‘আমি জানি না, আমি কি প্রতারণা ও বিভ্রমের জালে আটকে পড়েছি?’

৩. সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা:

অনেক নতুন বিনিয়োগকারী ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের “ফিনফ্লুয়েন্সার” বা আর্থিক পরামর্শক থেকে প্রভাবিত হয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, যারা তাদের মুনাফার গল্প শেয়ার করতেন। কিন্তু ঝুঁকি সম্পর্কে সেভাবে সচেতন না থাকার কারণে তারা এখন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

৪. ঝুঁকি এবং বাস্তবতা:

রমেশ নামে এক ব্যক্তি ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন এবং তার বিনিয়োগে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তার কথায়, ‘আমি ধার করা টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম, আর এখন পাওনাদারেরা আমার পেছনে লেগেছেন।’

৫. আর্থিক শিক্ষা:

আর্থিক পরামর্শক মোনিকা হালান বলেন, “শেয়ারবাজার কোনো জুয়ার আসর নয়।” তাকে বোঝানো হয়েছে যে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার আগে ঝুঁকি মেপে দেখতে হবে এবং তা সঠিকভাবে বুঝতে হবে।

মোনিকা আরও বলেন, “আপনি যেই টাকা বিনিয়োগ করবেন, তা এমন হওয়া উচিত যা অন্তত ৭ বছরের জন্য প্রয়োজন হবে না।”

৬. অর্থনৈতিক অবস্থা:

এই পতন এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর, মজুরি স্থবির এবং বেসরকারি বিনিয়োগ শ্লথ। এছাড়া, চাকরির সুযোগও কমে গেছে। বাজার বিশ্লেষক অনিন্দ্য চক্রবর্তী বলেন, “সাধারণ সময়ে চাকরিজীবীরা সাময়িক ক্ষতি সহ্য করতে পারেন, কিন্তু বর্তমানে মধ্যবিত্তের জন্য এক বিশাল সংকট চলছে।”

৭. ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি:

বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে শেয়ারবাজার কিছুটা পুনরুদ্ধার করতে পারে। অজয় বাগ্গা জানান, ফেব্রুয়ারির পর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি কমিয়েছে, যা বাজারের পুনরুদ্ধারের লক্ষণ।

তবে জয়দীপ মারাঠে মনে করেন যে, যদি বাজার আরও ৬-৮ মাস অস্থির থাকে, তবে অনেক বিনিয়োগকারী নিরাপদ ব্যাংক আমানতে ফিরে যাবেন।

ভারতের শেয়ারবাজারে এই পতন অনেক নতুন ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীর জন্য কঠিন শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেয়ারবাজারে প্রবেশের আগে ঝুঁকি এবং লাভের সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও বেশি সতর্কতা এবং আর্থিক শিক্ষা প্রয়োজন, বিশেষত নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে