ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন: নতুন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি!

২০২৫ জানুয়ারি ১৩ ২১:২৮:২৪
নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন: নতুন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তাদের সমমনা জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি পিরোজপুরে দুই পক্ষের মধ্যে এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা হাতাহাতিতে পরিণত হয়। এছাড়া, চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদসহ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় সংগঠনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে কি না, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চলছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেছেন, “দুটি ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে এবং আমরা সাংগঠনিকভাবে এটি তদন্ত করছি। তবে এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা যাচাই করছি কে অপরাধী এবং কে নিরপরাধ, তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে কোনো সমস্যা নয়।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ঘটনায় নাগরিক কমিটির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, তবে পিরোজপুরের ঘটনা তারা স্থানীয়ভাবে মিটমাটের পরামর্শ দিয়েছেন। ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক নেতাকে হেনস্তা করা হলেও তার সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্দোলনের সময়ে অনেকেই একসাথে কাজ করেছিলেন, কিন্তু এখন তারা আলাদা আলাদা কমিটিতে রয়েছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটি যাত্রা শুরু করে ৮ সেপ্টেম্বর, আর তাদের মধ্যে বেশ কিছু নেতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, যিনি ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

পিরোজপুরে কী ঘটেছিল?

পিরোজপুরে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ বিতরণকে কেন্দ্র করে দুই সংগঠনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পিরোজপুর টাউন ক্লাব মাঠে লিফলেট বিতরণের পর হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্যরা জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের বয়কটের ঘোষণা দেন। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে, একপক্ষ নাগরিক কমিটি ও অন্যপক্ষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নাম নিয়ে কাজ করছে।

চট্টগ্রামে কী ঘটেছিল?

চট্টগ্রামে শনিবার ওয়াসা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদসহ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করে হামলা চালানো হয়। তারা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বিতরণ করে জনসংযোগ করছিলেন, তখন তাদের অবরুদ্ধ করে হামলা চালানো হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতা মাসউদসহ অন্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে রবিবার চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দূরত্বের প্রশ্নে, আরিফ সোহেল বলেন, “আমরা পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছি। এর জন্য যদি কোনো ব্যবস্থা নিতে হয়, আমরা সেটাও করব।” তবে তিনি জানান, দুই সংগঠনের মধ্যে কোনো বিরোধ বা দূরত্ব নেই।

নতুন রাজনৈতিক দল গঠন:

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে গত আগস্ট থেকেই আলোচনা চলছে, যদিও এখন পর্যন্ত তা সাংগঠনিক রূপ লাভ করেনি। জাতীয় নাগরিক কমিটি সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করে সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। তারা জানান, আগামী মাস নাগাদ নতুন রাজনৈতিক দলের গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, “আমরা একটি বড় রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদেরও ভূমিকা থাকবে।”

এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিভিন্ন জায়গায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে এবং কিছু জায়গায় সংগঠনের নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে